বিশেষ সাক্ষাৎকার: মোবাশ্বের মোনেম

পিএসসিকে নতুন করে গড়ে তোলার সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে দরকার মেধাবী ও দক্ষদের নিয়োগ। এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি)। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংস্থাটি বিতর্কিত হয়ে পড়েছিল। নতুন সরকার এসে এর চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেমকে। পিএসসিতে কী পরিবর্তন আনবেন, কোন ধরনের সংস্কার করা হবে—এসব বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোছাব্বের হোসেন

প্রথম আলো:

আপনি যোগদানের পর পিএসসিকে তো অগোছালো অবস্থায় পেয়েছেন। আপনার যোগদানের আগে কার্যক্রম স্থবির ছিল প্রায় চার মাস। কিছু বিষয়ে আপনাকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন পিএসসিকে কেমন দেখছেন?

মোবাশ্বের মোনেম: প্রথম কাজ ছিল পিএসসির সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ন্যায্যতার ভিত্তিতে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া। চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করতে গিয়ে যে বিষয়গুলো উঠে আসে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বিসিএস পরীক্ষার জট, পিএসসির ক্ষুণ্ন হওয়া ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও তার সঙ্গে একটি চক্রের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ। এসব বিষয় নিয়ে আমি পিএসসির সদস্যদের সহায়তায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি এবং এই কার্যক্রম ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখা হবে।

এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলতে চাই, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্র অথবা যেকোনো প্রকার পরীক্ষাসংক্রান্ত দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি অবশ্যই নিশ্চিত করা হবে। অনেক বছর কমিশন উল্টো পথে হেঁটেছে। কমিশন চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আগের অবস্থা থেকে উত্তরণ চাই এবং পিএসসিকে সার্বিকভাবে কলুষমুক্ত করতে চাই।

প্রথম আলো:

আপনি আসার পর কমিশন তো তদন্ত করে জানিয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। আপনার কী মনে হয়েছে?

মোবাশ্বের মোনেম: বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের মাধ্যমে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পারি। প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে ইতিমধ্যে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভাব্য উৎসগুলো চিহ্নিত করে তা রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। কমিটিকে এক মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

প্রথম আলো:

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কী কী করতে চান?

মোবাশ্বের মোনেম: প্রশ্নপত্র ফাঁসের সব উৎস চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমি বদ্ধপরিকর। কমিটি এ বিষয়ে কাজ করছে।

প্রথম আলো:

পিএসসিকে কীভাবে ঢেলে সাজাতে চান?

মোবাশ্বের মোনেম: এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এর কোনো কাজকেই অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। পিএসসিকে একটি গর্ব করার মতো প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই। বর্তমানে পিএসসিতে যে প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়, তার যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। এরপর ‘সার্ভিস প্রসেস সিমপ্লিফিকেশনের’ (সেবাদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ) মাধ্যমে কার্যপ্রক্রিয়াকে আরও দক্ষ ও পরীক্ষার্থীবান্ধব করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের নিজেদের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে।

আমি মনে করি, আমরা যত বেশি অংশীজন ও নাগরিক সমাজের পরামর্শ নিতে পারব, তত বেশি ফল পাওয়া যাবে। অচিরেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গেও আমরা বসব, তাদের কী প্রত্যাশা তা-ও আমাদের গুরুত্ব দিয়ে শুনতে হবে। আমি মনে করি, পিএসসির অনেক বিষয়ে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আরও খোলামেলা আলোচনা করার প্রয়োজন আছে, যেমন পরীক্ষাপদ্ধতি, সিলেবাস, প্রশ্নপত্রের মান যুগোপযোগী করা ইত্যাদি। পরীক্ষার্থীরাই আমাদের সবচেয়ে বড় অংশীজন।

প্রথম আলো:

পিএসসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নতির জন্য কোনো পরিকল্পনা আছে?

মোবাশ্বের মোনেম: অবশ্যই আছে। জেনে অবাক হবেন, পিএসসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল প্রয়োজনের চেয়ে অত্যন্ত অপ্রতুল। আমি বিশ্লেষণ করে দেখেছি, পিএসসির মোট বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা হয়। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, তবে তা হতে হবে কার কী প্রশিক্ষণ দরকার, সেটা যাচাইয়ের পর। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ডেকে এনে কিছু গৎবাঁধা কথাবার্তা বলাটা প্রশিক্ষণ হওয়া উচিত নয়। আমি এর ঘোর বিরোধী।

ইতিমধ্যে জাইকা (জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা) আমাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের (নিড অ্যাসেসমেন্ট) কাজে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে। এটি নতুন কমিশনের সফলতা হিসেবে দেখা যেতে পারে। নতুন এই কমিশন কিছু প্রশিক্ষণের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু করেছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যাতে পদোন্নতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পান এবং কোনো প্রকার বৈষম্যের শিকার না হন, সে বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন।

প্রথম আলো:

মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ও পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের নানা রকম পর্যবেক্ষণ আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মোবাশ্বের মোনেম: মৌখিক পরীক্ষা থাকবে। তবে এখন যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাতে পরিবর্তনের চিন্তা আছে। মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতে চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা যাচাই করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। পিএসসির পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে।

প্রথম আলো:

আপনি যোগদানের সময় বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়ার সময় যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার কথা বলেছিলেন।

মোবাশ্বের মোনেম: এখন বিসিএসের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে সব পরীক্ষা ও প্রক্রিয়া শেষ করে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে সময় লাগে প্রায় চার বছর। এটা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। প্রয়োজনে পরীক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তনের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। তবে যেকোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। তাই একটি আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সময়ক্ষেপণের ক্ষেত্র ও কারণ চিহ্নিত করে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

বিসিএস পরীক্ষাপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনতে আমি কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে প্রতিটি পরীক্ষার জন্য আলাদা ‘টাইমলাইন’ করা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য একজন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেসব পরীক্ষায় জট লেগে আছে, সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৪৭তম বিসিএসকে (সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত) মাথায় রেখে দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনার কাজ চলছে।

ভবিষ্যতের একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়ে রাখি। এখন একটি খাতা দুজন পরীক্ষক দেখেন। আমরা যদি যোগ্য পরীক্ষক নির্বাচন করতে পারি, যিনি নিরপেক্ষভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের কাজটি করতে সক্ষম, তাহলে সময়ের অনেক সাশ্রয় হবে। এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পরীক্ষাপদ্ধতি চালু আছে। ভবিষ্যতে লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য জায়গা (স্পেস) নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে তাঁর দক্ষতা যাচাই করা সম্ভব। অন্যদিকে খাতা দেখার সময়ও কমবে।

প্রথম আলো:

৪৭তম বিসিএসে কি নতুন কোনো নিয়ম আসবে?

মোবাশ্বের মোনেম: আমরা একটা বিষয় নিয়ে কাজ করছি, সেটি হলো আবেদন করার পর প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে একটি ‘ইউনিক আইডি’ (পরিচয় নম্বর) দেওয়া হবে। এই আইডি দিয়ে তিনি পরবর্তী সময়েও বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারবেন। বারবার তাঁর আবেদন করার প্রয়োজন পড়বে না। ইউনিক আইডি নিয়ে আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে, যদিও তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নীতিমালার প্রয়োজন হবে। তারপরও ধারণাটি জানাচ্ছি। একজন পরীক্ষার্থী ইউনিক আইডি পাওয়ার পর যদি প্রিলিমিনারি (বিসিএসে নিয়োগের প্রথম পরীক্ষা) ধাপ পার হয়ে যেতে পারেন, তাহলে তাঁকে আর কোনো দিন প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তিনি লিখিতসহ পরবর্তী ধাপের পরীক্ষায় অংশ নেবেন। বিষয়টি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করব।

প্রথম আলো:

পিএসসির সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য আপনার পরিকল্পনা কী কী?

মোবাশ্বের মোনেম: আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ইনোভেশন (উদ্ভাবন) ও ট্রান্সফরমেশনে (রূপান্তর) আগ্রহী একজন মানুষ। পিএসসির বিদ্যমান সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই প্রতিষ্ঠানকে একটি প্রত্যাশিত উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি যা যা প্রয়োজন, তা করব। এ ক্ষেত্রে কমিশনের সদস্যদের সমর্থন রয়েছে। তাঁরা সহযোগিতা করছেন। আপনি জেনে খুশি হবেন, ইতিমধ্যেই এই লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি চেঞ্জ অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন ম্যানেজমেন্ট টিম (সিটিএমটি) গঠন করা হয়েছে। এই দল পাঁচ বছর মেয়াদি একটি কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কৌশলগত পরিকল্পনাটি হবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য পিএসসির রোডম্যাপ (পথনকশা)। প্রতিবছর এই রোডম্যাপের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমরা ক্রমাগতভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পিএসসির কর্মকাণ্ডকে আধুনিকায়ন ও নির্ভরযোগ্য করে তুলব। পিএসসির অফিস চত্বরেই একটি আধুনিক প্রেস (ছাপাখানা) নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনাগুলো ঘটবে না বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি যোগদানের পরপরই লক্ষ করি, ২১তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে ৪৬তম বিসিএসের সব তথ্য ও উপাত্ত শুধু পিএসসিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এটি আমার কাছে অত্যন্ত বিপজ্জনক মনে হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে এসব তথ্য একাধিক স্থানে রাখার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। পিএসসিকে আমরা বদলে দেব, ইনশা আল্লাহ।

প্রথম আলো:

পিএসসির সুপারিশের পরও নেতিবাচক প্রতিবেদনে অনেকে চাকরি পান না। এবারও ৪৩ তম থেকে ২২৭ জন বাদ পড়েছেন। এটি বন্ধে পিএসসি কোনো উদ্যোগ নেবে কি না?

মোবাশ্বের মোনেম: প্রথমেই একটি বিষয় পরিষ্কার করার প্রয়োজন। পিএসসি থেকে নিয়োগের সুপারিশের পর প্রার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচয় যাচাইপ্রক্রিয়ার সঙ্গে পিএসসির সম্পৃক্ততা থাকে না। সরকার উপযুক্ত এজেন্সির মাধ্যমে প্রার্থীদের অতীত যাচাই করে থাকে। এখানে পিএসসির কিছু করণীয় নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কিছু করণীয় থাকলে পিএসসি তা নিশ্চয়ই করবে। তবে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যুক্ত না থাকলে প্রার্থীদের বাদ দেওয়াটা সমর্থনযোগ্য নয়।

প্রথম আলো:

সাধারণত দেখা যায়, বিসিএসে প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ বেশি দেওয়া হয়। যদিও এই দুই ক্যাডারের মধ্যম পর্যায়ে পদের সংকট রয়েছে। তারপরও নিয়োগ বেশি কেন?

মোবাশ্বের মোনেম: প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে লোকবল প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কি না, সেটা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে কোন ক্যাডারে কত জনবল প্রয়োজন, তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করে। জনপ্রশাসন শূন্য পদ উল্লেখ করে পিএসসিতে পাঠায়। পিএসসি কেবল শূন্য পদের বিপরীতে যোগ্য ও উপযুক্ত প্রার্থীদের সুপারিশ করে থাকে। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সরকার এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল ছিল। এ অবস্থার অবসান হওয়া উচিত।

প্রথম আলো:

ক্যাডারগুলোর মধ্যে বৈষম্যের অভিযোগ আছে। বৈষম্য দূর করার কোনো সুপারিশ করবেন কি না?

মোবাশ্বের মোনেম: হ্যাঁ, প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে পদোন্নতি সাধারণত অন্যান্য ক্যাডারের চেয়ে দ্রুত হয়। বিগত সরকার এই দুই ক্যাডারের সঙ্গে একটি ‘প্যাট্রোন-ক্লায়েন্ট’ (পৃষ্ঠপোষক-গ্রাহক) সম্পর্ক তৈরি করেছিল, যেখানে এই দুই ক্যাডার নানাবিধ সুবিধা পেয়েছে। রাষ্ট্র ও পাবলিক সার্ভিসের শৃঙ্খলার স্বার্থে ক্যাডারবৈষম্যের অবসান হওয়া জরুরি। সব ক্যাডারকেই সমান সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

প্রথম আলো:

শেষ প্রশ্ন। অনেক বছর পর আমলার বদলে একজন একাডেমিশিয়ানকে পিএসসির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মোবাশ্বের মোনেম: আমি শিক্ষকতা পেশা থেকে এখানে এসেছি। সে কারণেই ছাত্রছাত্রী বা পরীক্ষার্থীদের আমার কাছে প্রত্যাশা অনেক। আমি ও কমিশনের সদস্যরা সবাই মিলে এই প্রত্যাশা পূরণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লব আমাদের সামনে পিএসসিকে নতুন করে গড়ে তোলার একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না।

প্রথম আলো:

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মোবাশ্বের মোনেম: আপনাকেও ধন্যবাদ।