বৌদ্ধবিহার জাদুঘরের কাস্টেডিয়ানের সাক্ষাৎকার
আশপাশে স্থাপনা হলে ইউনেসকোর তালিকা থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা আছে
আইন অমান্য করে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের দেয়াল ঘেঁষে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বিহারের সত্যপীরের ভিটাসংলগ্ন মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা ভবনের ওপর আরেক তলা উঠছে। এ অবস্থায় বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে পাহাড়পুরের নাম বাদ পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের জাদুঘরের কাস্টেডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিমের সঙ্গে।
প্রশ্ন :
আপনারা বলছেন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কোর জোনের ভেতরে ও সত্যপীরের ভিটাসংলগ্ন মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের কাজ হচ্ছে। আপনারা চিঠি দিয়ে দ্বিতল ভবনের কাজ বন্ধের অনুরোধ করেছেন। আপনারা চিঠি দিলেন কেন?
মুহাম্মদ ফজলুল করিম: পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত পুরাকীর্তি এবং ইউনেসকো–ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত প্রত্নস্থল। সপ্তম-অষ্টম শতকের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার সাক্ষী হিসেবে আজও প্রত্নস্থলটি দাঁড়িয়ে আছে। এ ছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে প্রাচীন মহামূল্যবান প্রত্নবস্তু রয়েছে। প্রত্নস্থল ও জাদুঘর দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী আসেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেসকো কর্তৃক বিহারটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত আইনের পাশাপাশি এখানে ইউনেসকোর প্রণীত আইন মেনে চলতে হয়। প্রত্নস্থল সংরক্ষণের জন্য ১৯৬৮ সালে (১৯৭৬ সালে সংশোধিত) পুরাকীর্তি আইন প্রণীত হয়। ওই আইনে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির কাছে কোনো ভবন নির্মাণ এবং সৌন্দর্যহানি ও ক্ষতি সাধন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়া বিশ্ব ঐতিহ্যের কেন্দ্র থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ বিধিবিধান পরিপন্থী। মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কোর জোনের ভেতরে সত্যপীরের ভিটা প্রত্নস্থলের কাছে।
প্রশ্ন :
আপনারা মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের নির্মাণকাজের কথা কখন জানতে পারেন?
মুহাম্মদ ফজলুল করিম: ২০১৯ সালে মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের কাজ শুরু করা হয়েছিল। সেই সময়কার কাস্টেডিয়ান মো. আবু সাঈদ ইনাম তানভিরুল ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধের জন্য বদলগাছি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছিলেন। এরপর দ্বিতল ভবনের কাজ বন্ধ ছিল। হঠাৎই মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের কাজ শুরু করা হয়। আমি গত ১৯ জানুয়ারি ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বদলগাছি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছি। ২৯ জানুয়ারি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দেন। গত সপ্তাহে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে এসে দেখছি, মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের কাজ চলছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। এরপর প্রশাসনের মৌখিক নির্দেশে দ্বিতল ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ বন্ধ করা হয়নি। এ কারণে ঠিকাদারের লোকজন দ্বিতল ভবনের সাটারিংয়ের কাঠ এখনো খোলেননি। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।
প্রশ্ন :
মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মিত হলে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে?
মুহাম্মদ ফজলুল করিম: পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার কয়েকটি স্থাপনার কারণে এমনিতেই ইউনেসকোর হুমকিতে আছে। তারপর যদি পাহাড়পুর কোর জোনের ভেতরে সত্যপীরের ভিটার কাছে ভবন নির্মাণ করা হয়, তাহলে আরও ঝুঁকিতে পড়বে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ার শঙ্কাও রয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরা মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখতে আসেন না, আসেন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দেখতে। পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে মালঞ্চা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্য স্থানে সরানো সম্ভব।