স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার
ইউরিয়ার দাম বাড়ায় কৃষক আরও সংকটে পড়বেন
ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ডিলার পর্যায়ে ইউরিয়া সারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৪ থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি ১৬ থেকে বাড়িয়ে ২২ টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউরিয়া সারের দাম বাড়ার বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন রাজশাহীর তানোরের স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ। তিনি কৃষি উৎপাদনে সাফল্যের জন্য ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছেন। সেরা কৃষি উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার-২০১৮ পেয়েছেন। সংকরায়ণের মাধ্যমে নূর মোহাম্মদ খরাসহিষ্ণু ও স্বল্প জীবনকালের ধান উদ্ভাবন করেছেন। এ পর্যন্ত তাঁর কৌলিক সারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই শতাধিক।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: কেজি প্রতি ইউরিয়া সারের দাম ছয় টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে কৃষক পর্যায়ে কি কোনো সংকট তৈরি হবে?
নূর মোহাম্মদ: এখনই তো সংকট চলছে। কৃষক পর্যায়ে ইউরিয়া সারের দাম ছিল ১৬ টাকা কেজি। কৃষক তো এই দামে সার পান না। একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। পরিবেশকেরা বলেন, ইউরিয়া নেই। আবার বেশি টাকা দিলে তাঁরাই সার বের করে দেন। পাঁচ দিন আগে আমি নিজেই ১৬ টাকা কেজির ইউরিয়া সার ১৮ টাকায় কিনেছি। এখন এই সংকট আরও বাড়বে। কৃষকদের আরও চড়া দামে ইউরিয়া কিনতে হবে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সারের মূল্যবৃদ্ধি ধান উৎপাদনের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে?
নূর মোহাম্মদ: এমনিতেই কৃষক সব সময় ধানের ন্যায্য দাম পান না। এ জন্য ধান ছেড়ে তাঁরা অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক কৃষক ধান ছেড়ে আমবাগান করছেন। বোরো মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে কৃষকেরা ৩০ কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করেন। আর আমন মৌসুমে ২৫ কেজি। চাষি এক বিঘা আলু চাষে ২৭ থেকে ১০০ কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করে থাকেন। ইউরিয়ার দাম বাড়ানোর কারণে ফসলের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে। বেশি খরচ করে উৎপাদন করা ফসল ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে না পারলে কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দেবে। এতে তাঁরা ধান ছেড়ে অন্য ফসলের দিকে আগ্রহী হবেন। আলু চাষের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এতে খাদ্যসংকটের সৃষ্টি হতে পারে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ইউরিয়ার দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়ানোর পরও সরকারকে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। আপনি কি মনে করেন, দাম না বাড়িয়ে সরকারের আরও ভর্তুকি দেওয়া উচিত?
নূর মোহাম্মদ: অবশ্যই সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত। কৃষক দেশকে খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণ করছেন। সারের দাম বাড়ানোর কারণে কৃষক উৎপাদন কম করলে দেশে আবার খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে। তখন সরকারকে বাইরে থেকে আমদানি করতে হবে। এর চেয়ে কৃষক পর্যায়ে সারের জন্য ভর্তুকি দেওয়াই ভালো।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: কৃষকেরা মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করেন, এমন অভিযোগ শোনা যায়। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
নূর মোহাম্মদ: এটা ঠিক, কৃষকেরা মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করেন। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার ব্যবহারের যে মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সে অনুযায়ী ইউরিয়া ব্যবহার করলে উৎপাদন কম হয়। কারণ, মাটির উর্বরতা শক্তি অনেক কমে গেছে। এ জন্য কৃষকেরা ইউরিয়া বেশি দিয়ে ফলন বেশি করার চেষ্টা করেন।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ইউরিয়া সার কম ব্যবহার করার জন্য কোনো বিকল্প প্রস্তাব আছে?
নূর মোহাম্মদ: মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সাধারণত উত্তম মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকার কথা, কিন্তু আমাদের মাটিতে ১ থেকে দেড় শতাংশের বেশি জৈব পদার্থ নেই। জৈব সার ব্যবহারের পরিমাণ বাড়াতে পারলে ইউরিয়া কম দিলেও চলবে।