দুদক সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি কতটা। ৭ জানুয়ারির মধ্যে তো আপনাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
ইফতেখারুজ্জামান: কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনকই বলতে হবে। খসড়া তৈরির কাজ চলছে। আশা করি, ৬ জানুয়ারির মধ্যে আমরা প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।
কাজ করতে গিয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন। প্রশাসনের কাছ থেকে কতটা সহযোগিতা পেয়েছেন।
ইফতেখারুজ্জামান: আমাদের অভিজ্ঞতা ভালোই বলতে হবে। দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে যে জায়গাগুলো চিহ্নিত করা দরকার, সেটা আমরা করেছি। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, সেটা আমাদের ভাবনায় ছিল। দুর্নীতি বন্ধে যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে, সেটা হলো দুদক। দুদকের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অনেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কথা বলেছেন। ঢাকার বাইরেও আমরা মতবিনিময় করেছি। দুদকের বর্তমান কাঠামো নিয়ে সবাই হতাশা প্রকাশ করেছেন। মানুষ দুদককে যে অবস্থায় দেখতে চায়, সেটা দুদক পূরণ করতে পারেনি। সরকার যেভাবে চায়, এত দিন তারা সেভাবে পরিচালিত হয়েছে।
অন্যান্য কমিশন থেকে আপনাদের কাজের ভিন্নতা কী।
ইফতেখারুজ্জামান: অন্যান্য কমিশন থেকে আমরা অনেকটা আলাদা ছিলাম। আমরা সরকারের কাছ থেকে সাচিবিক সুবিধা নিইনি। টিআইবি এই সুবিধা দিয়েছে। মানুষ দুর্নীতি সম্পর্কে খোলাখুলি যে কথাগুলো বলেছেন, সেটা হয়তো সরকারি পরিমণ্ডলে তাঁরা বলতেন না। সে ক্ষেত্রে বলব, সরকার থেকে আমরা কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতে পেরেছি।
আপনারা তো দুদকের সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কোনো তথ্য পেয়েছেন কি, যা আগে জানতেন না?
ইফতেখারুজ্জামান: আমরা দুদকের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। টিআইবির কাজের সূত্রে দুদক সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু সংস্কার কমিশনের কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখলাম এর ভেতরের সমস্যা প্রকট। দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তা ও বাইরের আমলাতন্ত্র থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের মধ্যে বৈষম্যটা অনেক বেশি। দুদকের নিজস্ব কর্মকর্তারা অনেক কিছু করতে চাইলেও সফল হননি আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে।
দুদকের আইনগত দুর্বলতা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।
ইফতেখারুজ্জামান: আইনগত দুর্বলতা যে একেবারে নেই, তা বলব না। কিন্তু কাঠামোগত দুর্বলতা প্রধান। আমাদের সুপারিশে আইনগত দুর্বলতার বিষয়টিও থাকবে। যেমন কর আইন, অর্থ পাচার আইন। কর আইনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আছে, সে ক্ষেত্রে দুদক তো প্রশ্ন করতে পারছে না। এগুলো আমরা খতিয়ে দেখেছি। প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছি।
আপনাদের কাজ চলমান থাকতেই সরকার নতুন দুদক গঠন করল এবং তা পুরোনো আইনে। এ বিষয়ে আপনাদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল কি?
ইফতেখারুজ্জামান: এটা খুবই কৌতূহলোদ্দীপক ঘটনা। সাবেক দুদক যে দায়িত্ব পালন করতে পারছিল না, সেটা আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম। কিন্তু সরকার তখন দুদক পুনর্গঠন করেনি। দুদকের কাছে সাবেক সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল, সেটা আগে তারা তদন্ত করেনি। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ নড়েচড়ে বসল। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করল। আবার বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা ছিল, সেগুলো প্রত্যাহার করা শুরু করল। তারা কাজ দেখাতে চাইল। এর মাধ্যমে দুদক প্রমাণ করল, তারা ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করে। দুদকের সঙ্গে আমাদের যেদিন বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, সেদিনই পদাধিকারীরা পদত্যাগ করলেন সরকারের চাপে। ফলে বৈঠকটি হলো না। সবাই বলেছিলেন, দুদকের তদন্তকাজগুলো চলুক। পদত্যাগের পর নতুন কমিশন গঠন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়াল। কমিশন না থাকলে অনুসন্ধান, তদন্ত কিছুই হবে না। রাজনৈতিক বিবেচনায়ই কমিশনারদের নিয়োগ করা হলো। আমরা যেভাবে কমিশনার নিয়োগের কথা ভেবেছিলাম, সেটা আর থাকল না। এটা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আমরা সার্চ কমিটির কাছে জানতে চাইলাম, কী প্রক্রিয়ায় তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হলো। তাঁরা আমাদের সময়ও দিয়েছিলেন কথা বলার জন্য। কিন্তু তাঁরা সেটা রাখতে পারেননি।
অর্থাৎ বৈঠক হয়নি। এরপর আপনারা কী করলেন?
ইফতেখারুজ্জামান: আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে বললাম, দুদক নিয়োগের মানদণ্ড যেন ঠিক থাকে। প্রধান উপদেষ্টা বললেন, বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদের। তারপরও তিনি দেখবেন জানালেন। বর্তমানে দুদকে চেয়ারম্যানসহ তিনজনের কমিশন। আমরা বলেছি, সংখ্যা বাড়াতে হবে। কাজের বিস্তৃতি বা গভীরতার দিক থেকে তিনজন কমিশনার যথেষ্ট নয়। আমরা বলেছি, কমিশনের প্রধান পদে প্রশাসন থেকে লোক নেওয়া হয়, সেই প্রথা ভাঙতে হবে। মর্যাদাপূর্ণ অন্যান্য পেশার প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। আমরা মনে করি, যে কমিশন গঠিত হয়েছে, সেটা অন্তর্বর্তীকালীন। আশা করি, আমাদের সুপারিশ পাওয়ার পর নতুন করে কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমানে যাঁরা আছেন, তাঁরা যদি যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখাতে পারেন, থাকতে পারেন, তবে কমিশনের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
সভা–সমাবেশে আপনার বক্তৃতা–বিবৃতিতে একধরনের হতাশার সুর লক্ষ করা যাচ্ছে।
ইফতেখারুজ্জামান: আমি ঠিক হতাশা বলব না। শঙ্কা আছে। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, তাঁরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করেননি। বরং দলীয়করণ ও রাজনীতিকীকরণের মধ্য দিয়ে এগুলোকে ধ্বংস করেছেন। জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন হলো, সেটা আমরা ধরে রাখতে পারছি কি না। অন্তর্বর্তী সরকার প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কাজটি হাতে নিয়েছে। এ কারণে আমি আশাবাদী কিন্তু সংস্কারটি কীভাবে হবে, নির্বাচনের আগে না পরে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। এ ক্ষেত্রে সমঝোতা প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
অন্যান্য দেশে দুদক বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কাজ করে?
ইফতেখারুজ্জামান: অন্যান্য দেশে এসব প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও দলীয় প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করে। তারা সরকার কর্তৃক নিয়োজিত কিন্তু নিয়ন্ত্রিত নয়। প্রতিষ্ঠানের কাছে সরকারকে জবাবদিহি করতে হয়। আর আমাদের এখানে সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনার কথা তারা ভাবতেই পারে না। কিন্তু দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সেটা করতে হবে।
দুদকের একজন সাবেক চেয়ারম্যান প্রতিষ্ঠানটিকে নখদন্তহীন বাঘ বলে অভিহিত করেছিলেন। আপনারা নখদন্ত বসাতে পেরেছেন কি?
ইফতেখারুজ্জামান: প্রথমেই আমরা নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনার কথা বলেছি। যাঁরা সব ধরনের প্রভাবমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, জনগণের মধ্যে যাঁদের ভালো ভাবমূর্তি আছে, তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছি। ২০ বছর ধরে যে প্রতিষ্ঠানটি নখদন্তহীন ছিল, সেটি রাতারাতি নখদন্তযুক্ত হয়ে যাবে না। তবে প্রক্রিয়াটা তো শুরু করতে হবে। আমরা সেটা করতে চেয়েছি। এর পাশাপাশি দুদকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন আনার কথা বলেছি। যে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব দুর্নীতি দমন, তাদের মধ্যে দুর্নীতি কোনোভাবে বরদাশত করা যায় না। দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দুদককে মুক্ত করতে হবে।
দুদকের নতুন চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন দায়িত্ব নেওয়ার পরই নিজের সম্পদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন। এটাকে কি আপনি ইতিবাচক বলে মনে করেন?
ইফতেখারুজ্জামান: এটা ইতিবাচক। আমরাই বলেছিলাম, দুদকের কমিশনারদের সম্পদের হিসাব সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দিতে ও জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। চেয়ারম্যান মহোদয় সেটি করেছেন। অন্য কমিশনাররা এখনো করেননি। আশা করি, তাঁরাও করবেন। দ্বিতীয়ত, হিসাবটি প্রতিবছর হালনাগাদ করতে হবে। আর সম্পদের হিসাব ঠিক আছে কি না, তা পরখ করে দেখার কথাও আমরা বলেছি। দুদকের শীর্ষ থেকে নিচের স্তরের প্রতিটি কর্মীর সম্পদ বিবরণী নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। দুদককে আমরা সম্পূর্ণ একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চাই। বর্তমানে দুদকের জবাবদিহির কোনো জায়গা নেই।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই লুটেরা অর্থনীতি চলে আসছে। এটা বহাল রেখে দুদককে কতটা কার্যকর করা যাবে?
ইফতেখারুজ্জামান: লুটেরা অর্থনীতি তো পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অংশ। পৃথিবীর সব দেশেই কমবেশি এটা আছে; কিন্তু সেখানে জবাবদিহি আছে। বিচার আছে। এমনকি যেসব দেশে গণতন্ত্র নেই, সেখানেও কিন্তু দুর্নীতির দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়। আমাদের এখানে বিচার ও জবাবদিহি দুটোই অনুপস্থিত। এখানে লুটেরা গোষ্ঠী উল্টো জবাবদিহির ক্ষেত্রটি নিয়ন্ত্রণ করছে। এখানে জবাবদিহি নেই বলেই দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপি রাষ্ট্রকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে যান। এই চৌর্যবৃত্তি ও লুণ্ঠন বন্ধ করতে না পারলে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। ব্যবসা, রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র—তিন দুষ্ট চক্র মিলে বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রসার ঘটিয়েছে। এই আঁতাত অটুট রেখে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা যায় না। এ কারণেই টিআইবি থেকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা খাতের সংস্কারের কথা বলে এসেছি। কিন্তু সরকার সেটি আমলে নেয়নি। দুর্নীতির প্রসারের অন্যতম প্রধান উৎস হলো ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, তারা এ কাজে ঢাল হিসেবে রাজনীতিক, আমলাতন্ত্র, এমনকি সংবাদমাধ্যমকেও ব্যবহার করে থাকে। তবে সব ব্যবসায়ী দুর্নীতি করেন না। আমাদের এখানে ব্যবসায়ীদের একটা কোটারি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল, তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত। এটা বন্ধ করতে হলে ব্যবসায় ক্ষেত্রে যে শুদ্ধাচারের অনুশীলন, সেটা জোরদার করতে হবে।
ধরে নিলাম, আপনাদের কমিশন দুর্নীতি বন্ধে একটি ভালো সুপারিশ করল। কিন্তু সেটা যে বাস্তবায়ন হবে, তার নিশ্চয়তা কী?
ইফতেখারুজ্জামান: আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমরা যদি একটা আদর্শ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের দুদকও পেয়ে যাই, তারা দুর্নীতি দমন করতে পারবে না, যদি আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী মহল ও রাজনীতিকেরা শুদ্ধাচার চর্চা না করেন। দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে আমাদের একাত্তরে কী আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, চব্বিশে কী উদ্দেশ্য নিয়ে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান হলো, সেটা মনে রাখতে হবে।
গত সাড়ে চার মাসে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো বিষয়েই শক্ত ভূমিকা রাখতে পারল না।
ইফতেখারুজ্জামান: আমি খুব অবাক হচ্ছি না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও তাদের প্রতি জনগণের যে বিরাট আস্থা আছে, সরকারের কাজে অনেক ক্ষেত্রেই তার প্রতিফলন দেখছি না। উপদেষ্টাদের কাজ হয়ে পড়েছে প্রতিক্রিয়ামূলক, পূর্বপরিকল্পিত নয়। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর যদি সরকার কী করতে চায়, সময়সীমাসহ তার একটি নীতিকৌশল দেশবাসীর কাছে তুলে ধরত, তাহলে কাজটি করা সহজ হতো। সেটা তারা করেনি। নীতিকৌশল থাকলে তারা ঠিক করতে পারত, এই সময়ে এই কাজ শেষ করবে। এ কারণেই আমরা দেখছি, একটি বিষয়ে একাধিক উপদেষ্টা বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়। বিচারপ্রক্রিয়া চলে। আবার ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই মামলা প্রত্যাহার হতেও দেখি। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন।
ইফতেখারুজ্জামান: দুদকের মধ্যে একধরনের সংস্কৃতি দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতায় থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। আবার ক্ষমতায় যাঁরা এসে গেছেন বা আসবেন বলে মনে করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এটা আগেও হয়েছে। এখনো হচ্ছে। আমরা তো দেখলাম, ৫ আগস্টের পর নতুন করে দখলবাজি, চাঁদাবাজি শুরু হলো। রাজনীতি যত বেশি নির্বাচনমুখী হচ্ছে, এই প্রবণতা তত বাড়ছে। কেননা নির্বাচনের জন্য অর্থ লাগবে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার–বাণিজ্য, মামলা–বাণিজ্যও চলছে।
আমাদের নির্বাচনী রাজনীতিতে মনোনয়ন–বাণিজ্য ও টাকার খেলা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এ ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশন কোনো নির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখছে কি না?
ইফতেখারুজ্জামান: আমরা বলার চেষ্টা করেছি, দুদক এককভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এর সঙ্গে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান জড়িত। রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয়, তাহলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষে হলো রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা ক্ষমতায় থাকবে বা যাওয়ার চেষ্টা করবে, তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকলে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। এ কারণেই আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোরও সংস্কার করতে হবে। এখানেই নির্বাচনী অর্থায়নের প্রশ্নটি আসে। সব দেশেই রাজনৈতিক দল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা ও অনুদান নেয়। কিন্তু কার কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে, সেটা তারা জনসমক্ষে প্রকাশ করে। আমরা সুপারিশ করেছি, নির্বাচনী ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কোন দল কার কাছ থেকে কত টাকা চাঁদা বা অনুদান নিয়েছে, সেটা প্রকাশ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, নির্বাচনে কালোটাকা ও মনোনয়ন–বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
ইফতেখারুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ।