কেন ও কীভাবে বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস লিখতে আপনার আগ্রহ হলো?
শ্রীনাথ রাঘবন: ১৯৭০-এর দশকের শেষভাগে জন্ম নেওয়া আমার প্রজন্মের অনেকের কাছেই ১৯৭১ একটা প্রতীকী বছর। ভারতের আন্তর্জাতিক যুদ্ধগুলোর মধ্যে ১৯৭১ ভিন্ন ধরনের যুদ্ধ ছিল। আমি নিজে প্রায় পাঁচ বছর সেনাবাহিনীতে ছিলাম। তাতে উপমহাদেশের সামরিক ইতিহাস ও যুদ্ধগুলোর ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করি। পিএইচডি গবেষণা শেষ করার সময়ে আমার প্রথম বইয়ের কাজও শেষ হয়। ভাবছিলাম, এখন কী করা যায়।
আমি ভারতীয় মহাফেজখানায় পি এন হাকসারের কতগুলো ফাইল নিয়ে কাজ করছিলাম। হাকসার ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর মুখ্য সচিব ছিলেন। ফাইলগুলোয় অত্যন্ত গোপনীয় অনেক বিষয় ছিল। ওগুলো ছিল মি. হাকসারের ব্যক্তিগত দলিল। নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম ও লাইব্রেরিতে তা জমা দেওয়া হচ্ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তির স্বাভাবিক নিয়মে এসব দলিলের এবং প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের অনেক কিছুই ন্যাশনাল আর্কাইভসে পাওয়া যেত না। তাতেই আমি বাঁধা পড়ে যাই।
কয়েক সপ্তাহ ধরে সেগুলো পড়ি। আমার কাজের জন্য প্রায় সব কটির ফটোকপি নিয়ে নিই। আমার মনে হয়, ভারত সরকারের সব তথ্য এসব দলিলে নেই। তখন আমি বিলাতে। ব্রিটিশ ন্যাশনাল আর্কাইভসে কাজ শুরু করি। পরে মার্কিন আর্কাইভসে। আমি জানতাম, ওসব আর্কাইভসে সবকিছু গুছিয়ে করা হয়। ৩০ বছর পর নিয়ম মেনে অবমুক্ত করা হয়। তাই ব্রিটিশ ও মার্কিন আর্কাইভসে কাজ করতে থাকি। পরে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানিতেও কাজ করি। এ কাজে ঢাকাও সফর করি।
ঢাকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিলই সংরক্ষিত নেই। কিন্তু কথা বলেছি অনেকের সঙ্গে। তাতে সংঘাতটি সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। আমার বইটার বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যাবে, আমি গবেষণা করেছি ভিন্নভাবে। তাতে বাইরের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে তুলে ধরেছি। কারণ তা-ই করতে চেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, বাংলাদেশ সৃষ্টির বিষয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক বই লেখা হয়েছে। কিন্তু গবেষণা চলাকালে আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে আসে যে ১৯৭১ ছিল সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ইতিহাসের একটি বিশেষ ঘটনা, যা ভালো করে বোঝা দরকার। কারণ, এর বিস্তৃতি বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা দক্ষিণ এশিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে।
আপনার প্রথম বই ওয়ার অ্যান্ড পিস ইন মডার্ন ইন্ডিয়া: আ স্ট্র্যাটেজিক হিস্ট্রি অব দ্য নেহরু ইয়ারস বইটি কীভাবে ১৯৭১: বাংলাদেশ সৃষ্টির বৈশ্বিক ইতিহাস বইটির গবেষণা ও লেখাকে প্রভাবিত করেছে?
শ্রীনাথ রাঘবন: প্রথম বইটি মূলত আমার পিএইচডি গবেষণার অভিসন্দর্ভ। এমনভাবে অনেক বই-ই লেখা হয়। এর দৃষ্টিকেন্দ্র জওহরলাল নেহরুর ১৭ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়। আমি বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলাম পাকিস্তান ও চীন সম্পর্কে ভারতের কূটনীতি এবং তখন জটিল অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সামরিক শক্তির ভূমিকার ব্যাপারে। বলা যেতে পারে, বইটি ছিল বিভিন্ন ধরনের সমস্যার ব্যাপারে ভারতের বিভিন্ন সরকার ও নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।
আমি খুব চেয়েছিলাম আমার পরের গবেষণা যেন এর চেয়ে একদম আলাদা হয়। হাকসারের দলিলগুলোর মধ্যে অনেক কিছু পাওয়া সত্ত্বেও বইটি আমি প্রধানত ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লিখতে চাইনি। ভারত কীভাবে ১৯৭১ সালের সংকট মোকাবিলা করেছে, বইটার বিষয়বস্তু তা নয়। সেদিক থেকে বিষয়টির প্রতিপাদ্য আমি বদলাতে পেরেছি। ভারত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি পক্ষ ছিল। আশা করি, সংকটে তার ভূমিকার ব্যাপারে ন্যায়বিচার করতে পেরেছি।
ভারতের লেখক-গবেষকদের মধ্যে একাত্তরের ঘটনাটিকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখার একটি প্রবণতা আছে। এ বই লেখার সময়ে বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেছেন?
শ্রীনাথ রাঘবন: ঠিকই বলেছেন। ভারত থেকে প্রকাশিত বইগুলোর অনেকগুলোতেই এটাকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘর্ষ হিসেবে দেখা হয়েছে। তার আংশিক কারণ যুদ্ধের সামরিক ফলাফল পরিষ্কারভাবে ভারত ও বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। যেসব বই পাওয়া যেত, সেগুলো পড়ার সময় মনে হয়েছিল, এই দিকটাকে বাড়িয়ে দেখার প্রবণতা আছে।
আমার বইটা প্রকাশের পর আর কেমন বই প্রকাশিত হচ্ছে, সেটা দেখতে গিয়ে মনে হয়েছে, ভারত কীভাবে ১৯৭১ সালের সংকট ও যুদ্ধের মোকাবিলা করেছে, সে বিষয়ে কয়েক বছর আগে প্রকাশিত প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রদূত চন্দ্রশেখর দাশগুপ্তের বইটি খুব ভালো। রাষ্ট্রদূত দাশগুপ্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপর ১৯৭২ সালে তরুণ কূটনীতিক হিসেবে তিনি ঢাকায় কাজ করেন। দেশটি সম্পর্কে তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি একজন নামী কূটনীতিক। আরও অনেক দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও তিনি বইটি লিখতে পেরেছেন।
তাঁর একটা বাড়তি সুবিধা ছিল যে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আর্কাইভ ব্যবহার করতে পেরেছিলেন। আমরা সে সুযোগ পাইনি। তাই বলতে পারি, ওই ধরনের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা ভালো বইও আছে। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকের কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ভূমিকা নির্ধারণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই মনে হয়, আগের দৃষ্টিকোণ হয়তো বদলেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেও কিছু ভালো বই লেখা হচ্ছে।
আপনার বইতে আপনি বিশ্লেষণ করেছেন ২৫ মার্চের পরে ভারত কেন দ্রুত সংঘাতের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু বিশ্লেষণ করেননি ভারত তা করলে কী হতো?
শ্রীনাথ রাঘবন: বইটি লেখার সময় এ ধরনের বিপ্রতীপ প্রশ্ন আমি বাদ দিয়েছি। ভারত আগেই হস্তক্ষেপ করলে হয়তো অনেক জীবন বেঁচে যেত, অনেক বাঙালির মৃত্যু ঠেকানো যেত। তবে তাতে নিজের ওপর অনেক কূটনৈতিক চাপ টেনে আনত। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নয়, ভারতের বিরুদ্ধে সে চাপ এমনিতেই ছিল; সম্ভবত সোভিয়েত ইউনিয়নের দিক থেকেও। কারণ, যুদ্ধের প্রায় শেষ দিকেও সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেক নিস্পৃহ ছিল।
কোনো বড় ধরনের শক্তিপরীক্ষা বা যুদ্ধ উপমহাদেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়ুক, তা তারা চাইত না। হতে পারে সোভিয়েত সমর্থনের ব্যাপারে ভারত অতটা নিশ্চিত হতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন নিশ্চিত হতে চেয়েছে যে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশটি স্বাধীন করতে পারবে। তারা অবশ্য তা করতে পেরেছে।
তবে এপ্রিল-মে মাসে বাংলাদেশিদের মনে যে প্রশ্নটি বারবার উঠেছে, তা হলো ভারত কেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম সি চাগলা, অধ্যাপক রহমতুল্লাহ্ খান, ড. সুব্রাহ্মনিয়াম প্রমুখ তখন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। আপনার বইতেও আপনি তা উল্লেখ করেছেন। ভারত আগেই স্বীকৃতি দিলে কী ঘটতে পারত?
শ্রীনাথ রাঘবন: আমি মনে করি, ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃত না দেওয়ার কারণ ছিল ভারতের আইনি ও রাজনৈতিক বিবেচনা। যেকোনো সার্বভৌম দেশকে স্বীকৃতি দিতে হলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূখণ্ডের ওপর সেই অস্থায়ী সরকারের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। মনে হয় না ঠিক ওই সময়ে (১৯৭১ সালের এপ্রিল-মে মাসে) প্রবাসী সরকারের তা ছিল। প্রবাসী সরকারের শপথ গ্রহণ ও রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতা ঘোষণার অনুষ্ঠানটি দেখুন। সেটা বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে হতে হয়েছিল। কিন্তু সেটার প্রস্তুতির জন্য তার আগে ভারত অনেক কিছু করেছে।
বাংলাদেশকে ভারত স্বীকৃতি দিয়েছিল ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর। তখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের দেশকে মুক্ত করছেন, প্রবাসী সরকারও ঠিক তার পিছু পিছু যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে ছিলেন। তাই সেটাই ছিল সঠিক মুহূর্ত। পরিকল্পনাও তা-ই ছিল। ভারত স্বীকৃতির ঘোষণা দিয়েছিল। আগে স্বীকৃতি দিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পাওয়া যেত না।
বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের পরের অভিজ্ঞতা মনে রাখা দরকার। জাতিসংঘের সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। চীন তার ভেটো ক্ষমতা পাকিস্তানের পক্ষে কাজে লাগিয়েছে। তার মানে, ভারত নিজে স্বীকৃতি দিলেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে পারত না। সত্যি বলতে কি, ভারতের স্বীকৃতি এসেছিল তার সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ছিল বলে নয়, বাংলাদেশি যোদ্ধারা, বাংলাদেশের অস্থায়ী সেনাবাহিনী সেখানে ছিল বলে।
আপনার বইয়ে উল্লেখ করেছেন পাকিস্তানকে কমিউনিস্ট-বিরোধী শিবিরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালের সংকটে পাকিস্তানকে সমর্থন করে। কিন্তু সেই যুক্তরাষ্ট্রই কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে সম্পর্ক করার জন্য তখন সূক্ষ্ম কূটনীতি চালায়। এটা কী স্ববিরোধী হলো না?
শ্রীনাথ রাঘবন: এটা আসলেই স্ববিরোধী। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পাকিস্তান ওই স্ববিরোধিতার মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও আগে খুব ভালোভাবে ভারসাম্য রেখেছিল। পাকিস্তান সিয়াটো ও সেন্টোর সদস্য ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। কিন্তু সেই পাকিস্তানই ১৯৬৩ সাল থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সঙ্গে স্বাধীন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৬৪ সালে চীনের প্রিমিয়ার চৌ এনলাই পাকিস্তানে গুরুত্বপূর্ণ সফর করেন এবং দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ় হয়।
আসলে ওই সম্পর্ককে ব্যবহার করেই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে চীনের সঙ্গে যোগাযোগের একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তখনো যুক্তরাষ্ট্র চীনকে স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তান তাদের ওই যোগাযোগের গোপন সূত্র ছিল। যে ধরনের স্পর্শকাতর কাজ তারা করতে যাচ্ছিল, সে জন্য পাকিস্তানকেই বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম মনে করা হয়েছিল।
আপনি লিখেছেন, আমেরিকা কি ভিন্ন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারত, যাতে ইয়াহিয়া খান কোনো রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে আগ্রহী হতেন? সে রকম সম্ভাবনা তো শেষ হয়ে যায় একাত্তরের মে মাসের মধ্যেই। কিন্তু অনেকেই মনে করেন সে সম্ভাবনা ২৫ মার্চেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
শ্রীনাথ রাঘবন: আমি বোঝাতে চেয়েছি, কেবল আমেরিকাই বাংলাদেশকে কিছু স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারত। আসল কথা হলো আমেরিকা যদি যথেষ্ট চাপ দিত, তাহলে ইয়াহিয়া ‘দেয়ালের লিখন’ পড়তে পারতেন। এটা অনেকটা এখন ইসরায়েল ও গাজার (ফিলিস্তিন) মধ্যেকার ঘটনার মতো। যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিতে পারে। একাত্তরেও আমেরিকার হাতে চাপ দেওয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল। রাজনীতির কথা বাদ দিন, বৈদেশিক ঋণ নবায়নের ব্যাপারে আমেরিকা যদি বলত তারা আর সাহায্য করতে পারবে না, তা পাকিস্তানকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিত। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে গণহত্যা বন্ধ করার আর কোনো উপায় ছিল।
বাঙালিরা স্বাধীনতার চেয়ে কম কোনো কিছু মেনে নিত না। আমেরিকা চাইলে অনেক বেশি চাপ দিতে পারত। কিন্তু তাতে সংকটটি সম্পর্কে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি অন্য রকম ধারণার ভিত্তিতে হতে হতো। আমার দৃষ্টিতে রিচার্ড নিক্সন ও হেনরি কিসিঞ্জার এটাকে বাংলাদেশের সংকট হিসেবে দেখেননি। তাঁরা বাংলাদেশ এবং এখানকার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের গভীর আগ্রহ সম্পর্কে জানতেন। কিন্তু তাঁরা এটাকে বিশ্বের বিশাল ‘দাবা খেলা’য় আরেকটি চাল বলে মনে করেছিলেন। তাঁরা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চেয়েছিলেন। কারণ, তাঁরা জানতেন তাতে চীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর চাপ দিতে পারে, তারা উত্তর ভিয়েতনামের ওপর চাপ দিতে পারে। তাতে আমেরিকা ভিয়েতনাম থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
এত বিরাট একটি জনগোষ্ঠী যে বিশাল এক ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে, গণহত্যামূলক সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে—মার্কিনদের কাছে তা ছিল মূল্যহীন। আমি বুঝতে পারি না, এক শ বছর বেঁচে থাকা সত্ত্বেও কিসিঞ্জার কেন একটিবারও বাংলাদেশে তাঁদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে একটি কথাও বলেননি। আমি মনে করি, পাকিস্তানের ওপর চাপ দেওয়ার মতো ভালো অবস্থানে আমেরিকা ছিল। তাদের উচিত ছিল জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামকে মেনে নেওয়া। তারা তা না করে ওই সংগ্রামের রাজনৈতিক গুরুত্ব অস্বীকার করেছে এবং বাংলাদেশকে ভূরাজনীতির দাবার একটি ঘুঁটি হিসেবে দেখেছে।