যে নিয়মে দুধ পান করলে দূর হবে ঘুমের সমস্যা
আজ ১ জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস এটি।
২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। এবারের বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের প্রচারণামূলক প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘দুগ্ধজাত খাবার উপভোগ করুন’, অর্থাৎ পুষ্টিমান ও স্বাদ বিবেচনায় দুধ প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সর্বোত্তম খাবার। দুধে বিদ্যমান প্রোটিন, শর্করা, খনিজ ও ভিটামিন সব বয়সী মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটায়।
দুগ্ধজাত খাবার, বিশেষ করে গরুর দুধকে, প্রায়ই ‘ঘুম উন্নীতকারী’ খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গরুর দুধ ‘ঘুম উন্নীতকারী’ উপাদান ট্রিপটোফ্যান, মেলাটোনিন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের একটি ভালো উৎস। ট্রিপটোফ্যান (দুধে বিদ্যমান একধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, গরুর দুধে ট্রিপটোফ্যানের পরিমাণ ৪০ মিলিগ্রাম ১০০ গ্রাম-১), মেলাটোনিন (দুধে বিদ্যমান একধরনের হরমোন) অনিদ্রা প্রতিকার ও নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যেই ঘুমের ব্যাধি—অনিদ্রা—ইনসমনিয়া দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্তও এই ব্যাধি দেখা যায়। দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য গ্রহণ সাধারণত ঘুমের গুণমানকে উন্নত করতে পারে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঘুমানোর আগে হালকা উষ্ণ দুধ পান করার কয়েকটি সম্ভাব্য সুবিধা রয়েছে।
এক. দুধের ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটনিনের সূত্রপাত ঘটে। এটা মস্তিষ্কে যে সংকেত পাঠায়, তা স্নায়বিক উত্তেজনা প্রশমনে সাহায্য করে। এ কারণে দুধ খেলে সহজে ঘুম আসে। তা ছাড়া দুধে মেলাটোনিন নামক হরমোন থাকে, যা ঘুমের উন্নতিতে সাহায্য করে।
দুই. দুধের উষ্ণ তাপমাত্রা শরীর ও মনকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে, যা প্রশান্তি অনুভব করাতে এবং উদ্বেগ কমাতে পারে।
তিন. দুধে অল্প পরিমাণে মেলাটোনিন হরমোন থাকে, যা ঘুম-জাগরণের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঘুমের উন্নতি করতে পারে।
চার. দুধ ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা পেশির নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং পেশির ক্র্যাম্প কমাতে পারে ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে না।
পাঁচ. দুধ ম্যাগনেশিয়ামেরও একটি উৎস। এটি একটি খনিজ, যা শিথিলতা বাড়াতে এবং ঘুমের মান উন্নত করতে পারে।
ছয়. দুধে কেসিন ট্রিপটিক হাইড্রোলাইজ নামক পেপটাইড রয়েছে, যা মানসিক চাপ দূর করে এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে সাহায্য করে।
ঘুমানোর আগে হালকা গরম দুধ পান করার সময় কিছু অতিরিক্ত জিনিস মনে রাখা উচিত। যেমন—
এক. অল্প পরিমাণ দুধ পান করে শুরু করুন এবং দেখুন এটি আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করে। যদি আপনি দেখতে পান যে এটি আপনাকে ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে, আপনি ধীরে ধীরে দুধ পান করার পরিমাণ বাড়াতে পারেন (সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ন্যূনতম ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা প্রয়োজন)।
দুই. কিছু লোক গরম দুধ পান করতে পছন্দ করে, আবার অন্যরা ঠান্ডা পছন্দ করে। আপনি কোন তাপমাত্রা পছন্দ করেন, সে অনুযায়ী দুধ পান করুন।
তিন. দুধ পান করার পর সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় যাওয়া উচিত নয়। সাধারণত ঘুমানোর ৩০ মিনিট আগে গরম দুধ পান করা ভালো। এতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার শরীর ও মনকে শিথিল করার জন্য যথেষ্ট সময় দেবে।
চার. দুধে চিনি বা মধু না দেওয়া ভালো। কারণ, চিনিতে থাকা অতিরিক্ত শর্করা শরীরের গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। পরিশেষে বলা যায়, দুধ পানে ঘুমের ব্যাধি—অনিদ্রা—ইনসমনিয়া প্রতিরোধ সম্ভব, এটি মোটেও মনগড়া কথা নয়; বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও গবেষণালব্ধ তথ্য প্রমাণ করে, অনিদ্রা প্রতিরোধে দুধের ভূমিকা রয়েছে। অতএব রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ পান করে দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণের মাধ্যমে ভালো ঘুম নিশ্চিত করা সম্ভব।
সূত্র: এ কে এম এম হুমায়ুন কবির, মিল্ক অ্যান্ড ডেইরি ফুডস: নিউট্রিশন, প্রসেসিং অ্যান্ড হেলদি এজিং (২০২৪) (প্রথম সংস্করণ), সিআরসি প্রেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ড. এ কে এম এম হুমায়ুন কবির অধ্যাপক (দুগ্ধবিজ্ঞান), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়। ই-মেইল: [email protected]