মহাবিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ২৪ হাজার। তাঁদের আনা-নেওয়ার জন্য বাস আছে সাকল্যে চারটি। মানে, ছয় হাজার শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে বাস। এই
সংখ্যার অযৌক্তিকতা তর্কাতীত। তাই যৌক্তিকসংখ্যক বাসের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন শিক্ষার্থীরা। অধ্যক্ষ নিজ কক্ষে তাঁদের প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে বললেন, ‘কোন দল করো? তোমাদের নেতা কে? বাস চাও, কয় টাকা বেতন দাও?’
যেকোনো অবস্থায় যেকোনো মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের কথার এমন ‘ছিরি’ প্রথমত ভব্যতাবিরোধী, দ্বিতীয়ত এখতিয়ারবহির্ভূত। আর সেই ঘটনা যদি ঢাকা কলেজের মতো ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঘটে, তাহলে তা একই সঙ্গে লজ্জাজনক ও দুঃখজনক।
ছাত্র ও শিক্ষকসমাজের দুর্ভাগ্য, গত মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ সত্যি সত্যিই আন্দোলনরত ছাত্রদের নিজ কক্ষে ডেকে এসব কথা বলেছেন এবং ‘কাকতালীয়ভাবে’ তাঁর কক্ষ থেকে বের হওয়ার পরই ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকেরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজনকে বেধড়ক মারধর করেছেন।
অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদের কথায় যে কারও মনে হতে পারে শিক্ষাগুরুকে সেবা করে শিষ্য বিদ্যা লাভ করবে—এ নিয়মের মধ্যে আগেকার দিনে যে লেনদেন নিহিত ছিল, আজ আর তার প্রয়োজন নেই। ‘বাস চাও, কয় টাকা বেতন দাও’ প্রশ্নে প্রতীয়মান হয়, বাজার এসে শিক্ষার দাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে এবং অভিভাবক বা ভর্তুকিদাতা সরকার সেই দাম মিটিয়ে দিচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের বাসের দাবি এক দিনে উঠে আসেনি। অনেক দিন ধরেই তাঁরা এ দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের দাবি অমূলকও নয়। সাধারণ প্রক্রিয়া অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবি অধ্যক্ষকে জানাবেন। অধ্যক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করবেন। সেটি না করে অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদ ছাত্রদের রাজনৈতিক পরিচয়ের সুলুকসন্ধান করেছেন। তাঁদের ‘নেতা’ কে, সেটিও জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়েছে, তিনি মনে করেন ঢাকা কলেজের ছাত্ররা যে কয় টাকা বেতন দেন, তা দিয়ে আর যা-ই হোক অন্তত বাসের আবদার করা যায় না।
তবে এ-সংক্রান্ত সরকারি কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে, অধ্যক্ষের এই নীতিগত অবস্থান যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না। হাজার হাজার শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য মাত্র চারটি বাস অতি নগণ্য। এ সত্য মানতে হবে।
এ ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষকেরই মনে রাখা দরকার, শ্রদ্ধা স্বয়ম্ভূ নয়, এটি অর্জন করার জিনিস। নিরপেক্ষতা, শোভনতা, সৌজন্য, দূরত্ব—শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।