‘বিপদ বলে কয়ে আসে না’—সব সময় এই কথা খাটে না। অনেক সময়ই বিপদ বলে কয়ে আসে। বিপদের সেই ‘বলা কওয়াকে’ যাঁরা পাত্তা দেন না, শেষ পর্যন্ত হয় তাঁরা নিজেরা বিপদে পড়েন, নয়তো তাঁদের গাফিলতির খেসারত দিতে গিয়ে অন্যদের বিপদে পড়তে হয়।
এই ধরনের ‘পূর্বঘোষিত বিপদ’ ঘটেছে নোয়াখালী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের পুরোনো ভবনের শিশু ওয়ার্ডে। সেখানকার ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। খসে পড়া পলেস্তারার ঘায়ে অসুস্থ পাঁচ শিশু ও তাদের স্বজনসহ নয়জন আহত হয়েছে। আপাতত সান্ত্বনার বিষয় হলো এই ঘটনায় কেউ মারা যায়নি।
এটি যে ‘পূর্বঘোষিত বিপদ’ তাতে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়, কেননা ২০১৫ সালে গণপূর্ত বিভাগ ওই ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিল। বছরখানেক আগেও একই ভবনের পার্শ্ববর্তী আরেকটি ওয়ার্ডে পলেস্তারা খসে পড়ে কর্তব্যরত নার্সসহ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ওই ভবনে আরও বেশ কয়েকবার পলেস্তারা খসে পড়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এরপরও রোগীর চাপ সামলাতে ওই ভবনে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখা হয়েছিল। তার মানে পলেস্তারা যে খসে পড়বেই, তা সবাই জানত। শুধু তার পতন মুহূর্তটির কথা আগেভাগে কেউ জানতে পারেনি।
সংবাদমাধ্যমে এসেছে, আহতদের মধ্যে পাঁচ মাস বয়সী শিশুও রয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত এক নার্সের জবানি থেকে জানা যাচ্ছে, হঠাৎ বিকট শব্দে ছাদ থেকে বিশাল পলেস্তারার খণ্ড খসে মেঝেতে পড়ে তা টুকরো টুকরো হয়ে রোগীদের ওপর পড়ে। ওয়ার্ডে থাকা অর্ধশতাধিক রোগী ও তাদের স্বজনেরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। তখন আহত রোগী ও স্বজনদেরও উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেনি। এই দুর্ঘটনা আরও বড় আকারে ঘটতে পারত। অনেকে নিহত হতে পারতেন। কিন্তু ওই মুহূর্তে শিশুরা যে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে গেছে, তাদের মধ্যে যে দীর্ঘমেয়াদি ট্রমা তৈরি হয়েছে, তা তো কখনো হিসাবে ধরা হবে না।
আজ থেকে চার বছর আগে যে ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, কোন বিবেচনায় সেই ভবনে শিশু ওয়ার্ড চালু রাখা হয়েছে, তা এক বিরাট প্রশ্ন। ‘রোগীর চাপ সামলাতে’ এই প্রাণঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কারও আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। যেখানে এর আগেও কয়েকবার পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তো বিপদ ‘না বলে না কয়ে’ আসেনি।
খোঁজ নিলে দেখা যাবে, শুধু নোয়াখালী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল নয়, এই অবস্থা আরও বহু হাসপাতাল ও বিদ্যালয়ে আছে। সেসব জায়গায় পতনোন্মুখ পলেস্তারা মাথার ওপর নিয়ে শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে শিশুরা। সেসব পরিত্যক্ত ভবনের বোবা কংক্রিটের মধ্য থেকে বিপদ অব্যক্ত ভাষায় ‘আসছি! আসছি!’ বলছে। সেই সতর্কতার ভাষা বুঝতে হবে। দ্রুত সেগুলো সংস্কার করতে হবে।