দেশের হাওরাঞ্চলের বোরো ধান আর কিছুদিনের মধ্যেই পাকতে শুরু করবে। তাই কৃষকের ঘরে ঘরে ফসল তোলার প্রস্তুতি চলছে। অবশ্য সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কাও উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ঝড়বৃষ্টির মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। এ মাসের শুরুর দিকে কিছু বৃষ্টি হয়েছে। ফলে হাওরাঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ওই অঞ্চলের বোরো চাষিদের সবচেয়ে বড় ভয় বৃষ্টি। কারণ, হাওরাঞ্চল অপেক্ষাকৃত নিচু, বৃষ্টির পানিতে তা সহজেই তলিয়ে যায়। তেমনটি ঘটলে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে, বোরো চাষিরা সর্বস্বান্ত হন, দেশের মোট ধান উৎপাদনও কম হয়। এককথায় হাওরাঞ্চলে ফসলহানি ঘটলে দেশের গোটা অর্থনীতির ওপরেই তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে।
সে কারণে বোরো ধান ফলিয়ে ঘরে তোলার আগপর্যন্ত হাওরাঞ্চলকে পানিমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে সরকারি উদ্যোগে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধগুলো ওই অঞ্চলের কৃষকদের রক্ষাকবচ। প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে বাঁধগুলো মেরামত করার প্রয়োজন হয়, কোনো কোনো স্থানে নতুন করে নির্মাণের প্রয়োজনও দেখা দেয়। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু কোনো কোনো বছর বাঁধ নির্মাণে বিলম্ব হয়; শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে কাজ শেষ করতে গিয়ে কাজের মান খারাপ হয়। ফলে বাঁধগুলো স্থানে স্থানে দুর্বল হয়; ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল এলে সেসব জায়গা ভেঙে গিয়ে হাওরে পানি ঢুকে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। সে কারণে আমরা প্রতিবছর যথাসময়ে ফসল রক্ষা বাঁধগুলো নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শেষ করার ওপর তাগিদ দিয়ে থাকি।
এ বছর আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, ফসল রক্ষা বাঁধগুলো নির্মাণ ও মেরামতের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন আস্থা ব্যক্ত করা হয়েছে যে বৃষ্টির মৌসুমে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতে এবার ফসলহানির আশঙ্কা নেই; বাঁধগুলো ফসল রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের বরাতে আমরা এ-ও জানতে পেরেছি, এখনো অনেক বাঁধের মজবুতকরণের জন্য দুরমুশ পেটানো, গাছ লাগানো প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করা হয়নি। তা ছাড়া সব ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজের গুণগত মান কতটা নিশ্চিত করা হয়েছে, তা নিরূপণ করা কঠিন। এ কাজগুলো অবিলম্বে সম্পন্ন করা উচিত। কারণ, এ মাসেই আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বাঁধগুলো মজবুত করা না হলে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
বৃষ্টি ও সম্ভাব্য পাহাড়ি ঢল থেকে হাওরের ফসল রক্ষা করার উদ্দেশ্যে নির্মিত ও মেরামতকৃত বাঁধগুলোর জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সেগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা। পাউবো কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায় না। বাঁধগুলোর যেটুকু দেখভাল হয়, তা করেন স্থানীয় লোকজন। এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কৃষকেরা যদি ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর দিকে নিয়মিত সতর্ক দৃষ্টি রাখেন, তাহলে কোথাও কোনো বাঁধের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দ্রুতই মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া যায়। বৃষ্টির মৌসুম শুরুর দিকে এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মৌসুমের শুরুতে বাঁধের দুর্বল স্থানগুলো ভেঙে গেলে পরবর্তী সময়ে ফসল রক্ষা অত্যন্ত কঠিন হয়ে ওঠে।