হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম

সম্পাদকীয়

হাওর অঞ্চলের ফসল দেশের বিপুল মানুষের চাহিদা মেটায়। ফলে হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ও সংরক্ষণে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অনিয়ম ও দুর্নীতি ঠেকাতে ঠিকাদারদের বদলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে বাঁধের কাজগুলো করানো হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষকেরাই এ কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করেন। পিআইসি থেকে বাঁধের প্রকল্প আবার ঠিকাদারদের হাতে তুলে দিতে এবং পিআইসির মধ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় এমন ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে।

সেখানকার ৯টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের দৈর্ঘ্য ২১৫ কিলোমিটার। এবার সম্ভাব্য পিআইসি সংখ্যা ১৩০টি। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব কটি পিআইসি গঠন শেষ করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ১০টি। এর মধ্যেই গত বুধবার বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও মেরামতকাজ শুরু করা হয়েছে।

যেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনওসহ স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, হাওর থেকে দেরিতে পানি নামায় জরিপ, প্রাক্কলন তৈরিসহ অন্যান্য কাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় পিআইসি গঠনের কাজ কিছুটা পিছিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে পিআইসি গঠন না করেই বাঁধের কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের বদলে সেসব নেতা তাঁদের ঘনিষ্ঠজনদের এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এর পেছনে চলছে বিপুল অর্থের লেনদেনও। এমন পরিস্থিতিতে সময়মতো ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে চিন্তিত কৃষকেরা। বোরো ফসল রক্ষা নিয়ে শঙ্কিত তাঁরা।

স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কৃষকদের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, প্রকৃত কৃষকদের দিয়েই পিআইসি গঠন করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকেরাই বলছেন, পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে ফসল রক্ষা বাঁধের পিআইসি গঠন। যথাসময়ে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার পরিণতিতে ২০১৭ সালের মতো হাওরে কোনো বিপর্যয় ঘটুক আমরা চাই না। কৃষকদের কাছ থেকে পিআইসি নিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কৃষকেরা নিজেদের খরচে এমনকি ধারকর্জ করে এ বাঁধ নির্মাণ করে থাকেন। কাজ শেষে সরকারি অর্থ পান তাঁরা। কিন্তু সেই অর্থ পেতে মাসের পর মাস লেগে যায়, নানা ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আমরা হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নিয়ে কোনো অনিয়ম দেখতে চাই না। অসাধু কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চক্র ভেঙে দেওয়া হোক।