বহু শিক্ষিত তরুণ এখন শহরে গিয়ে চাকরি খোঁজার বদলে গ্রামে সাধারণ কৃষক ও খামারিদের সঙ্গে মিলিত হয়ে উৎপাদনমূলক কিছু করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলছেন। এই দিকে সরকারের মনোযোগ আছে। এই খাতে প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সেই সহায়তা অপ্রতুল বলে প্রতীয়মান হয়। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার নিয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তার প্রমাণ মেলে।
ওই প্রতিবেদন বলছে, ময়মনসিংহের আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারে পর্যাপ্ত আধুনিক অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি আছে। শুধু লোকবল নেই। এ কারণে খামারিদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বাচ্চা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানে তিন হাজার হাঁস পালনের অবকাঠামো আছে। কিন্তু হাঁস আছে মাত্র দেড় হাজার। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য যে আধুনিক ও উন্নত মানের যন্ত্রটি রয়েছে, তাতে একসঙ্গে প্রায় ৪৫ হাজার বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এখানে মাসে মাত্র ১৫ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করা যাচ্ছে। এখানে যে অবকাঠামো আছে, তাতে ১৭ জন লোক থাকার কথা। কিন্তু একজন ব্যবস্থাপক ও মাত্র পাঁচজন কর্মচারী দিয়ে চলছে খামার। এ কারণে খামারিদের যে পরিমাণ হাঁসের বাচ্চার চাহিদা রয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই খামার থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে ইনকিউবেটর যন্ত্রের মাধ্যমে ফোটানো হাঁসের বাচ্চা নিয়ে স্থানীয় খামারে লালন-পালন করে এ অঞ্চলের খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের যে পরিমাণ বাচ্চা দরকার, তা না পাওয়ায় তঁারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দেশের সাধারণ মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে সরকার যে কার্যক্রম পরিচালনা করে, তার অংশ হিসেবে এই খামার পরিচালিত হয়।
প্রজননকাজের প্রসারের জন্য এখানে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয় জিনডিং, খাগি ক্যাম্পবেল, বেইজিং, নাগেশ্বরী, ইন্ডিয়ান রানারসহ বেশ কয়েকটি উন্নত প্রজাতির হাঁস ও কৃত্রিমভাবে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য অত্যাধুনিক ইনকিউবেটর যন্ত্র। এখানে যে হাঁসগুলো রয়েছে, এগুলো দেশীয় জাতের হাঁসের তুলনায় দ্রুত বর্ধনশীল এবং বেশি পরিমাণে ডিম দেয়। তাই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস চাষ করে লাভবান হওয়ার আশায় এই হাঁসগুলোর প্রতি খামারিরা ঝুঁকছেন। এ জন্য তাঁরা সব সময়ই এখান থেকে বাচ্চা কেনার জন্য চেষ্টা করেন।
এখন তাঁরা যদি সময়মতো বাচ্চা না পান, তাহলে তাঁরা খামার করার বিষয়ে আগ্রহ হারাতে পারেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে আঞ্চলিক খামার ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ কারণে এখনই এই প্রজনন খামারে পর্যাপ্ত লোকবল ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।