দুই লেনের রাস্তা চার লেন হলে যানচালক ও যাত্রীর মনে স্বস্তি নামার কথা। কিন্তু সেই চার লেনের মাঝখানে যদি গলার কাঁটার মতো বিদ্যুতের তারের খুঁটি সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে স্বস্তির বদলে ভীতি নামে। আতঙ্ক নামে। সেই আতঙ্ক জীবনহানির আতঙ্ক। এই আতঙ্কের চেয়ে সংকীর্ণ রাস্তায় যানজটে পড়ে ঘণ্টা দুয়েকের ভোগান্তি পোহানো কম পীড়াদায়ক।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) গাফিলতি ও উদাসীনতাজনিত ধীরগতির কারণে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-সোনাপুর সড়কের ১৩ কিলোমিটারজুড়ে এই জীবনহানির আতঙ্ক নেমে এসেছে। এই রাস্তা দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। সড়কের অধিকাংশ অংশ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। দুই লেনের জায়গায় চার লেন হয়েছে। কিন্তু দুই লেন থাকাকালে সড়টির পাশ ঘেঁষে যে বিদ্যুতের খুঁটির সারি ছিল, তা এখনো একই জায়গায় রয়েছে। ফলে বর্তমান চার লেনের মাঝামাঝি অবস্থানে পড়ে গেছে খুঁটির সারি। সড়কের অনেকখানিতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সেখান দিয়ে যান চলাচলও শুরু করেছে। এখন যানবাহনকে বিদ্যুতের খুঁটিগুলোকে সাবধানে পাশ কাটিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এখনো বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ঘটার আশঙ্কা বেশ জোরালো।
চার লেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। সওজ বলছে, খুঁটি সরানোর জন্য প্রায় সাত কোটি টাকা বিউবোকে পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বিউবো খুঁটি সরায়নি। বিউবো বলছে, ভূমির উন্নয়নসহ কারিগরি কিছু সমস্যার কারণে খুঁটি সরাতে দেরি হচ্ছে। ১৩ কিলোমিটার এই সড়কে খুঁটি রয়েছে ২৫০টি। নিয়ম অনুযায়ী, সড়কের কাজ শুরুর আগেই বিউবো তাদের খুঁটিগুলো সরিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা বেশির ভাগই সরায়নি। বিউবোর বক্তব্য হলো বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর আগে সড়কের ভূমির উন্নয়ন, অধিগ্রহণসহ নানা বিষয় থাকে। এ কারণে চাইলে খুঁটি সরিয়ে নেওয়া যায় না। তা ছাড়া জেলা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দুটি ৩৩ কেভি লাইন ওই সড়ক দিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রেখে খুঁটি সরানো যায় না।
বিউবোর এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। একটি রাস্তা দুই লেন থেকে চার লেন করা যে খুঁটি সরানোর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ও সময়সাপেক্ষ, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। সদিচ্ছা ও আন্তরিক চেষ্টা থাকলে সড়কের কাজ শেষ হওয়ার আগেই খুঁটিগুলো স্থানান্তর করা যেত। এখন যদি ঝড়ঝাপটায় কোনো খুঁটি হেলে পড়ে কিংবা বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে চলন্ত যান কিংবা পথচারীর ওপর পড়ে প্রাণহানি ঘটে, তার দায় কে নেবে? এই প্রশ্ন ওঠার আগেই খুঁটিগুলো রাস্তার পাশে সরিয়ে নেওয়া হোক।