২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সড়কে বন্য প্রাণীর মৃত্যু

২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এই মতামত পাতাতেই ‘মারা পড়ছে বন্য প্রাণী’ শিরোনামে একটি সম্পাদকীয় আমরা প্রকাশ করি। প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি খবর ছিল সম্পাদকীয়টির বিষয়। সেই খবরে বলা হয়েছে, ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন বন্য প্রাণী। এরা সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে আসা-যাওয়া করে। রাতেই এদের বিচরণ বেশি। তখন দ্রুতগামী যানবাহনের আঘাতে বেশির ভাগ বন্য প্রাণী মারা পড়ে। বছরে ৪০ থেকে ৫০টি বন্য প্রাণী মারা যাচ্ছে।’

এই একই বিষয়ে গত পাঁচ বছরে অনেক প্রতিবেদনই আমরা করেছি। ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘যানবাহনের আঘাতে মারা পড়ছে বন্য প্রাণী’, একই বছর ২০ নভেম্বর ‘বন্য প্রাণী বাঁচাতে রাতে যান চলাচল বন্ধ হচ্ছে’, ২০১৯ সালের ৮ জুলাই ‘লাউয়াছড়া বনের প্রাণী বাঁচাতে বিকল্প সড়ক হচ্ছে’ আর চলতি বছর ১১ জানুয়ারি প্রকাশ করি ‘লাউয়াছড়া উদ্যানের সড়কে-রেলপথে মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণী’।

লাউয়াছড়া অরণ্য নিয়ে আমাদের এই সব রোদনই যে শেষ পর্যন্ত অরণ্যে রোদন হয়েছে, তার প্রমাণ ৩ মার্চ প্রথম আলোরই শেষ পাতায় প্রকাশিত এই খবর, ‘বিকল্প সড়কের অভাবে মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণী’। প্রতিবেদনটি বলছে, প্রাণী হত্যা এখনো অব্যাহত আছে। বরং রাস্তা মসৃণ ও সুন্দর হওয়ায় বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা, দ্রুততর হয়েছে গাড়ির গতি, ফলে বেড়েছে হত্যা। এ সড়কে প্রতিদিন এখন ২০০ থেকে ৩০০ যানবাহন চলাচল করে।

এই পাঁচ বছরে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে বা আঘাতে মারা গেছে কম করে হলেও আড়াই শ বন্য প্রাণী। মারা পড়া এসব প্রাণীর মধ্যে আছে চশমা হনুমান, ঘরগিন্নি সাপ, শজারু, গন্ধগোকুল, চিতা বিড়াল, হলুদ ফণীমনসা, সোনালি শিয়ালের মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী।

অথচ বিকল্প একটি সড়ক হলেই বন্ধ করা যেত এ বিনাশ। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক পর্যালোচনা সভায় বিকল্প সড়ক নির্মাণের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। বনের বাইরে দিয়ে রাধানগর থেকে বটতলা পর্যন্ত একটি বিকল্প সড়ক করাও যায়। কিন্তু সাড়ে তিন বছরে জরিপ আর কিছু চিঠি চালাচালি ছাড়া আর কিছুই হয়নি। অথচ যেখানে দরকার নেই, সেখানে আমরা সেতু গড়ছি; একটার জায়গায় তিনটা সেতু করছি, কয়েক দিন পরেই ভেঙে ফেলতে হবে জানার পরও সেতু বানাচ্ছি। প্রায় অক্ষত রাস্তা ভেঙে আবার নতুন করে গড়ছি। অথচ অতি প্রয়োজনীয় এ রাস্তা আমরা করতে পারছি না।

তারপরও আবারও আমরা সম্পাদকীয় লিখলাম। কে জানে এবার হয়তো টনক নড়বে। বিকল্প একটা সড়ক হয়তো হবে। এর আগপর্যন্ত অন্তত রাতে যান চলাচল বন্ধ ও যানের গতিনিয়ন্ত্রণে সড়কে রোধক বসানোর উদ্যোগ নিন।