৮ জুন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণায় স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব দুর্নীতি ও দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংক্রমণের এক বছর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসাসুবিধার সম্প্রসারণ করতে না পারা, বাজেট ও যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সব জেলায় ১০টি করে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা, অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ফেলে রাখা এবং ১৩ লাখের বেশি টিকাগ্রহীতাকে দ্বিতীয় ডোজ সরবরাহ করতে না পারা। ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও কেনার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, সমন্বয়হীনতা ও চুক্তিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল বলে মন্তব্য করে টিআইবি।
জাতীয় কমিটি ও বিএমআরসি একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ সাড়া না দেওয়ায় ট্রায়াল প্রচেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে সরকার চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও জটিলতা কাটেনি এখনো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, দামের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় চীন নারাজ হয়েছে। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মোমেন বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতার কারণে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা পেতে দেরি হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক টিআইবির প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির অভিযোগ তোলা অনেকের কাছে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম নিয়ে শুধু টিআইবি কথা বলছে না। সংবাদমাধ্যমে বছরজুড়েই স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তথ্যভিত্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ এসব খবর খণ্ডন করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালের টেস্টিং জালিয়াতি, একজন ড্রাইভার বা নিম্নপদস্থ কর্মচারীর দুর্নীতি বা বিচ্ছিন্ন কোনো কর্মকর্তার মাধ্যমে অস্বচ্ছতার খবর ছাড়া কেউ স্বাস্থ্য খাতের বড় কোনো দুর্নীতি দেখাতে পারেনি। করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি, পিপিই কেনায় দুর্নীতি, লোক নিয়োগে উৎকোচ-বাণিজ্য, বিদেশ থেকে চিকিৎসাসেবার অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেশে এনে বিমানবন্দরে ফেলে রাখা তাঁর কাছে বড় দুর্নীতি মনে হয়নি। তাহলে কোনটি বড় দুর্নীতি? মন্ত্রীর দাবি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সবকিছু ঠিকমতো চলছে। তাহলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালককে পত্রপাঠ বিদায় নিতে হলো কেন?
মন্ত্রী যখন তাঁর মন্ত্রণালয়ের সবকিছু ঠিক আছে বলে সাফাই গাইছেন, তখন জাতীয় সংসদের সদস্যরা কী বলছেন, তা পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। সরকারি, বিরোধী দল কিংবা সরকারের শরিক দলের সদস্যরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি-অনিয়ম ও অদক্ষতার কঠোর সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছেন।
তাই সত্য অস্বীকারের পুরোনো পথ পরিহার করে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উচিত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। তিনি একজন নিম্নপদস্থ কর্মচারীর কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই কর্মচারীকে যাঁরা লালন-পালন করে এসেছেন, তাঁরা কোথায়? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে অতীতে যাঁরা জড়িত ছিলেন এবং এখনো আছেন, তাঁদের সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সময়ের দাবি।
মন্ত্রী মহোদয়কে মনে রাখতে হবে, উটপাখির মতো বালুতে মুখ গুঁজে থাকলে ঝড় থামবে না।