যখন চারদিক থেকে খারাপ খবর আসছে, তখন বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ (সোলার হোম সিস্টেম) ব্যবহারে বাংলাদেশের দ্বিতীয় অবস্থানে আসার খবরটি আমাদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করে। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ মানুষ বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে। নেপালে ১১ শতাংশ মানুষ বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তারা প্রথম অবস্থানে আছে।
গত মঙ্গলবার বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট (জিএসআর) প্রকাশ করেছে আরইএনএ-২১। বাংলাদেশ সোলার হোম সিস্টেমের জন্য বিশেষ ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে। এতে বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারকারী যে ছয়টি দেশকে তালিকায় রাখা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে।
বাসাবাড়ি ছাড়া বাংলাদেশে সেচের জন্যও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১ হাজার ৫০০টি সেচপাম্প সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে চালু আছে। যদিও সার্বিক চাহিদার তুলনায় এটি খুবই সামান্য। অন্যদিকে বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়লেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারকারী ৪৭টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। এ তালিকায় এশিয়ার মধ্যে আছে শুধু জাপান।
বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে পিছিয়ে থাকা সম্পর্কে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা দায়িত্ব এড়ানোর শামিল। তিনি বলেছেন, বেসরকারি খাতের ৪০টি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা পারেনি। এখন সরকার দুই বছরের মধ্যে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার এই উদ্যোগ আগে নিল না কেন? বেসরকারি খাতের যে ৪০টি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা কেন পারেনি, তা কি খতিয়ে দেখা হয়েছে?
২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গড়ে বেড়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। আর সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে ২০১০ সালে ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় ছিল, ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৯৫ শতাংশে। এটি বড় অগ্রগতি। তবে দেখার বিষয় এই বিদ্যুৎ সরবরাহ কতটা নিরবচ্ছিন্ন ও লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ একটি নিয়মিত ঘটনা।
জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্য একটি উদ্বেগের বিষয় হলো রান্নার কাজে অধিক হারে ক্ষতিকর জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। রান্নার কাজে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, এমন শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। এ তথ্য জ্বালানি খাতের অনেক সাফল্যকে ম্লান করে দেয়।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন পরিবেশবান্ধব, তেমনি খরচও কম। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এই দিকে নজর না দিয়ে জীবাশ্ম বা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেই সর্বশক্তি নিয়োগ করছেন। বিদ্যুৎ খাতে প্রকৃত সাফল্য আনতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ দিতে হবে।