ঢাকার সাভারের সিঅ্যান্ডবি-আশুলিয়া বাজার সড়কে সোলার সড়কবাতি স্থাপনের খবরটি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। স্বস্তি এই কারণে যে একদিকে ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোকে এখন আর ডাকাতের কবলে পড়তে হচ্ছে না আর অন্যদিকে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। মঙ্গলবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাতি না থাকার কারণে সড়কটিতে চলাচলকারী যানবাহনে প্রায় রাতেই ডাকাতির ঘটনা ঘটত। কোনো কোনো রাতে একসঙ্গে ২০ থেকে ২৫টি যানবাহনেও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সড়কটিতে সোলার সড়কবাতি স্থাপনের পর ডাকাতি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সূর্য থেকে পাওয়া শক্তি দিয়ে সৌরবিদ্যুতের আলোয় সারা রাত আলোকিত হচ্ছে রাস্তাটি।
রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আরডিএফ) নামের একটি প্রতিষ্ঠান সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টিআর/কাবিখার মাধ্যমে এসব সোলার সড়কবাতি স্থাপন করেছে। তাদের কার্যক্রমের আওতায় আরও রয়েছে সোলার হোম সিস্টেম, বৃহদাকার সোলার সিস্টেম, বায়োগ্যাস ও উন্নত চুলা। আরডিএফ এ পর্যন্ত সাভার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ৩৮২টি সোলার প্যানেল ও সোলার সড়কবাতি স্থাপন করেছে। আমরা তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই, সারা দেশে এ ধরনের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ুক। যদিও দেশের অনেক স্থানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সৌরবিদ্যুৎ বড় ভূমিকা পালন করছে। অথচ আমাদের দেশে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও পর্যাপ্ত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মতো একটি সৌর-আলোকিত দেশে সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এখানে বছরে ৩০০ দিনের বেশি সময় রোদ থাকে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে সারা বছর এত বেশি রোদ থাকে না, কিন্তু সেখানে কার্যকর অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অনেক বেশি সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে সে রকম কার্যকর অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে।
সৌরবিদ্যুতের সুবিধা হচ্ছে, এতে লোডশেডিংয়ের ঝামেলা নেই। চাহিদা অনুযায়ী সব সময়ই বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বর্তমানে নওগাঁ, যশোরসহ কয়েকটি এলাকায় সৌরবিদ্যুচ্চালিত পাম্পের সাহায্যে সেচকাজ চলছে। যদি পরিকল্পিতভাবে সারা দেশেই সৌরবিদ্যুচ্চালিত পাম্পের সাহায্যে সেচকাজ করা সম্ভব হয়, তাহলে বছরে বিপুল পরিমাণ ডিজেলের সাশ্রয় হবে। এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের ব্যাপক সম্প্রসারণের পথে যেসব বাধা রয়েছে, তা চিহ্নিত করা দরকার। ডিজেল বা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য পরিবেশগত যে সমস্যা রয়েছে; সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে সেসব সমস্যা নেই। সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব। তাই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারে সরকারের আরও উদ্যোগী হওয়া দরকার।