নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। চর পড়ে স্রোতহীন হয়ে যাচ্ছে একসময়ের খরস্রোতা নদী। সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ মনে করে, এসব চরের বালু কেটে নেওয়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই, বরং তা সবার জন্য উপকার বয়ে আনে। তারা মনে করে, ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু কেটে নিয়ে এলে নদীর নাব্যতা বাড়ে এবং জোয়ার–ভাটার পানির স্বাভাবিক চলাচল সহজ হয়।
সাধারণ মানুষের এই সাধারণ ধারণার সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালী ‘বালুখেকোরা’ দিনের পর দিন প্রকাশ্যে বিভিন্ন নদীর বালু কেটে নিয়ে বিক্রি করছে। এতে মানুষের উপকার হচ্ছে ভেবে জনসাধারণ তাঁদের বাধা দেয় না। যাঁরা এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বুঝতে পারেন এবং প্রতিবাদ করতে চান, তাঁদের কণ্ঠরোধ করতে প্রভাবশালী মহল পেশিশক্তি ব্যবহার করে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বরিশালের উজিরপুরে সন্ধ্যা ও কচা নদীতে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। নদী দুটির প্রায় ২২ কিলোমিটারে অন্তত ২৫টি খননযন্ত্র বসিয়ে মাসের পর মাস এই অবৈধ কাজ চলছে। এতে উজিরপুর-সাতলা সড়ক, সাতলা-বাগধা বেড়িবাঁধের সাতলা অংশ এবং কচা নদীতে সদ্য নির্মিত সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, শিকারপুর থেকে ওটরা পর্যন্ত সন্ধ্যা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। এই এলাকায় অন্তত সাতটি স্থানে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। বালু তোলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। আর কচা নদীর ভবানীপুর থেকে সাতলা প্রায় ১২ কিলোমিটার নদীর ১৫টি স্থানে খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তোলায়ও জনপ্রতিনিধিসহ অনেকে জড়িত।
এভাবে বালু তোলায় অনেকের নদীসংলগ্ন জমি ভেঙে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে উজিরপুর-সাতলা সড়ক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাতলা বাগধা বাঁধের সাতলা অংশ। কচা নদীর সাতলা এলাকায় এলজিইডি ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করেছে। সেতুসংলগ্ন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায় এটি হুমকির মুখে রয়েছে।
বালু তোলার সঙ্গে জড়িত একজনের বক্তব্য হলো, ‘বালু তোলায় ভরাট নদী খনন হয়। এতে ক্ষতি নেই। বরং সরকারের উপকারই হয়।’ এই কথা সাধারণ মানুষ মেনে নিলেও প্রশাসন কীভাবে এত দিন মেনে নিচ্ছে, সেটি উদ্বেগের বিষয়।
অবশ্য স্থানীয় প্রশাসন এখন বলছে, নদী থেকে বালু তোলা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিষয়টি জানার পর তাঁরা অভিযান শুরু করেছেন। অনেকে নদীতে খননযন্ত্র রেখে পালিয়ে গেছেন। এ অভিযান যাতে লোকদেখানো না হয়, সেটিই সাধারণের প্রত্যাশা।
যাঁরা বালু তোলেন এবং প্রশাসনের যাঁদের সামনে এভাবে বালু তোলা হয়, তাঁদের সবার মনে রাখা দরকার, নদী থেকে বালু তোলা ও বালুমহালের ইজারা নীতিমালা রয়েছে। সে নীতিমালার বাইরে যাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।