২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের দুর্দশা

সম্পাদকীয়

যশোরের পুলেরহাটে অবস্থিত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের দুর্দশা নিয়ে বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোয় আবারও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, গত বছরের ১৩ আগস্ট কেন্দ্রটিতে তিনজন শিশুকে পিটিয়ে হত্যা এবং ১৫ জনকে আহত করার অভিযোগ ওঠার পর যশোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত তদন্ত কমিশন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরিবর্তন আনার সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করার ছয় মাস পরেও এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এই ছয় মাসে ওই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের পাঁচজন শিশু আত্মহত্যার চেষ্টা করে; কেন্দ্রের সীমানাপ্রাচীর টপকে পালিয়ে যায় আট শিশু। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনায় কোনো ইতিবাচক উন্নয়ন ঘটেনি। আসলে সেখানকার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং শিশুদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিবর্তনমূলক আচরণ মোটেও তাদের সংশোধন ও উন্নয়নের অনুকূল নয়। কেন্দ্রটিতে মোট ১৫০ জন থাকার ব্যবস্থা আছে, কিন্তু সেখানে বর্তমান রাখা হয়েছে ৩৩৬ জনকে। তাদের খেলাধুলা ও সংস্কৃতিচর্চার পর্যন্ত সুযোগ নেই।

১৮ বছরের কম বয়সী এই শিশুদের এমন বন্দী অবস্থায় খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা একান্ত জরুরি। সেখানে তাদের জন্য মাদকদ্রব্য সহজলভ্য। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দুই আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে শিশুদের কাছে মাদকদ্রব্য বিক্রি করার অভিযোগ ওঠে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই দুই আনসার সদস্যকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তার ফলে শিশুদের মাদকদ্রব্য পাওয়া ও সেবন করা বন্ধ হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি।

মনে রাখা প্রয়োজন, যশোর, গাজীপুর ও টঙ্গীতে অবস্থিত তিনটি শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে যেসব শিশুকে আটকে রাখা হয়, তারা নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত, অভিযুক্ত বা অপরাধ করেছে বলে সন্দেহভাজন। অপ্রাপ্তবয়স্ক বলে তাদের এসব কেন্দ্রে রাখা হয় সংশোধনের লক্ষ্যে। কিন্তু সেখানে থেকে যদি তাদের সংশোধন ও উন্নয়ন না ঘটে, তাহলে সরকারের এমন উদ্যোগের কোনো অর্থ থাকে না। তাই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া একান্ত জরুরি। বিশেষত, তাদের নিয়মিত পরামর্শ বা কাউন্সেলিং, বই পড়া, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যাতে তারা বন্দী অবস্থায় হতাশা, বিষণ্নতা, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকতে পারে এবং নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনে সচেষ্ট হতে পারে।