জনগণের জন্য বরাদ্দ করা তহবিল নয়ছয় করে কোঠাবাড়ি নির্মাণে আজ আর অনেকেই লজ্জার কিছু খুঁজে পান না। অনেকের কাছে তা গৌরবের বিষয়। দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বড় অংশ সেই ‘গৌরব’ অর্জনের রুদ্ধশ্বাস প্রতিযোগিতায় বরাবরই ‘আত্মনিবেদিত’ থাকেন। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে যদি জনসাধারণের চলাচল করা রাস্তা ও তাদের অজু-গোসলের ঘাটলা থেকে ইট খুলে পাকা ভবন তৈরির অভিযোগ ওঠে, তাহলে সেই ‘গৌরবপ্রত্যাশী’ প্রতিযোগীদের আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে বুঝতে কারও বাকি থাকে না।
এমন অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার পূর্বভাগ ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের (চান্দেরপাড়া) সদস্য ইয়াছিন মিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, একটি রাস্তার ও একটি মসজিদের ঘাটলার ইট খুলে নিয়ে তিনি নিজের বসতবাড়ির ভবন ও সীমানাপ্রাচীর বানিয়েছেন। প্রশাসন প্রাথমিক তদন্তে ইট আত্মসাতের সত্যতা পেয়ে ওই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, এ ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সরকারি রাস্তা থেকে প্রভাবশালী লোকেরা প্রকাশ্যেই ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে রুখে দাঁড়াতে পারছে না। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, তাঁদের মধ্যে জনপ্রতিনিধিরাও আছেন। জনগণ যাঁদের উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত করেছে, তাঁরাই জনগণের রাস্তার ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিলে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিদুল ইসলাম রাস্তার ইট তুলে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে খবর বেরিয়েছিল। ওই বছরেরই ২৬ জুন নরসিংদীর রায়পুরায় মির্জাচর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল মানিক ও ব্যবসায়ী আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে রাস্তার ইট তুলে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তারও আগে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের নলতা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পুলক সরকারের বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তার প্রায় ৫০ হাজার ইট তুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল।
এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমে কখনো আসে না। আর আসে না বলেই এ ধরনের ‘নিম্ন রুচির চোরের’ সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই ইট চুরির মতো অসুস্থ উপায়ে ধন সঞ্চয়ের নৈতিক অনুমোদন সমাজে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।