রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জবাবদিহি

ঢাকার হাতিরঝিল থানার পুলিশ ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ায় তামজিদ হোসেন নামের এক যুবকের জীবন রক্ষা পেয়েছে। এ জন্য অবশ্যই তারা ধন্যবাদ পেতে পারে। অন্যদিকে গাইবান্ধা সদর থানার পুলিশের কর্তব্যে অবহেলার কারণে হাসান আলী নামের এক ব্যবসায়ীকে জীবন দিতে হয়েছে। এর দায়ও তাঁরা এড়াতে পারেন না।

পত্রিকার খবর ও পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রথম ঘটনায় এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত র‍্যাব সদস্যরা ব্যবসায়ী তামজিদকে অপহরণ করে তাঁর কাছে দুই কোটি টাকা উৎকোচ দাবি করেন। র‍্যাব সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন এবং সিদ্ধান্ত হয় যে তাঁর বোনের মাধ্যমে যমুনা ফিউচার পার্কে ১২ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এরপর তামজিদের বোন বিষয়টি হাতিরঝিল থানায় জানালে তারা ঘটনাস্থল থেকে চার র‍্যাব সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। রানু বেগম নামের যে নারী অপহরণ নাটকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন, পুলিশ তাঁকেও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। তিনি তৈরি পোশাকের স্টক লট কম দামে দেওয়ার কথা বলে তামজিদকে ফাঁদে ফেলেন।

পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারছে না—এই দোহাই দিয়ে বিএনপির আমলে র‍্যাব গঠন করা হয়, যাতে পুলিশ ছাড়াও সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, বিজিবির সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত হন। র‌্যাবের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে নানা সময়ে নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় এই বাহিনীর কিছু সদস্যের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি আদালতে প্রমাণিত। র‍্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে সাধারণত বেশির ভাগ অভিযোগ ওঠে মানুষকে অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের।

গাইবান্ধার ঘটনায় পুলিশ সরাসরি অপরাধে জড়িত না হলেও আওয়ামী লীগ নেতা ও দাদন ব্যবসায়ী মাসুদ রানার অপকর্মে সহায়তা করেছে। ব্যবসায়ী হাসান আলী ওই নেতার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেন দুই বছর আগে। সেই ঋণ সুদ-আসলে ১৯ লাখ টাকা হয়েছে। টাকা না দেওয়ায় গত ৬ মার্চ লালমনিরহাটের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে তাঁকে অপহরণ করেন মাসুদ রানা। হাসান আলীর স্ত্রী ওই রাতে থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগ আছে, ৭ মার্চ থানায় আহূত সালিসি বৈঠকে মাসুদ রানার বাসা থেকে হাসান আলীকে থানায় ডেকে আনেন পুলিশের একজন উপপরিদর্শক। বৈঠক সফল না হওয়ায় মাসুদ রানা আবার হাসান আলীকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখেন। শনিবার সেখানে তাঁর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।

কেউ বিপদে পড়ে টাকা ঋণ নিলে তাকে আটক রাখার আইন দেশে নেই। মাসুদ রানা আইনের আশ্রয় না নিয়ে একজন মানুষকে বাড়িতে আটকে রেখেছেন, যা বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ। হাসান আলীর স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ‘সালিসি বৈঠকের পর দুজন থানা চত্বর থেকে বেরিয়ে গেছেন’ বলে যে সাফাই গেয়েছেন, তা দায় এড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টামাত্র। হাসান আলী যদি মুক্ত মানুষ হবেন, তাহলে পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে কেন মাসুদ রানার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসবেন?

দুটি ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। প্রথম ঘটনায় র‍্যাবের চার সদস্য হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। অপরাধ আড়াল করার কোনো সুযোগ নেই। দ্বিতীয় ঘটনায়ও থানা-পুলিশের গাফিলতি স্পষ্ট।

জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত, তাঁরাই যদি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন কিংবা অপরাধীকে সহায়তা করেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এটাই বোঝাতে হবে যে র‍্যাব-পুলিশের সদস্যরাও আইনের ঊর্ধ্বে নন।