অশীতিপর বৃদ্ধ রাবেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে ১৭ বছর আগে দায়ের করা অস্ত্র মামলাটি হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ মনোযোগের বিষয় হয়েছে। এ ঘটনার দুটি অস্বাভাবিক দিক রয়েছে। প্রথমত, মামলাটি হাইকোর্টে স্থগিত হওয়ার পরেও সে আদেশ অগ্রাহ্য হওয়া এবং দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে কী করে মামলাটি ঝুলে থাকতে পারল। এটা স্বতঃসিদ্ধ যে হাইকোর্ট বিভাগের যেকোনো আদেশ অধস্তন আদালতের গোচরে আসামাত্রই তা পালন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ঠিক কী কারণে এ মামলায় হাইকোর্টের আদেশ অমান্য হতে পারল, তা এখনো অনুদ্ঘাটিত। অবশ্য তলব করার পরে ঢাকার সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ হাইকোর্টে হাজির হয়ে ইতিমধ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এখন যথানিয়মে হাইকোর্ট বিষয়টির সুরাহা করবেন।
নির্দিষ্ট এই মামলাটি সূত্রে আমরা স্মরণে আনব যে কয়েক বছর ধরে সুপ্রিম কোর্ট পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার পরিসংখ্যান আলাদা করছেন। এতে সার্বিকভাবে একটি উদ্বেগজনক চিত্রই ফুটে ওঠে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা ছিল যথাক্রমে সোয়া ৩ লাখ ও ২ লাখ ২৯ হাজার। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। অথচ পুরোনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করার কোনো উদ্যোগ বা পরিকল্পনা প্রতীয়মান হয় না। বিচার প্রশাসনে এ ধরনের উদ্যোগহীনতা আলোচ্য মামলাটিকে দীর্ঘ ১৭ বছর চলমান রেখেছে বললে অত্যুক্তি হবে না।
তেজগাঁও থানা এলাকার ৩/ক গার্ডেন রোড, কাজী আবদুল জাহিদের ঘরের দক্ষিণ পাশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রাবেয়া খাতুনকে। গ্রেপ্তারের সময় তঁার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ছয়টি গুলি উদ্ধারের দাবি করে পুলিশ। এর দায়ে ২০০০ সালের জুনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাবেয়া খাতুন ও তঁার মেয়ের জামাইসহ তিনজন। পরের বছরের মার্চে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল পুলিশ। আইন অনুযায়ী এ মামলা ২০০৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে অধস্তন আদালত ৩০ লাখ মামলার ভারে জবুথবু। ২০০২ সালের মামলাটি দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা ইঙ্গিতবহ যে এত বেশি পুরোনো মামলা নিশ্চয় আরও অনেক আছে। কিন্তু আলাদাভাবে রুল জারি করে এমন মামলার জট দূর করা সহজ হবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা হাইকোর্ট বিভাগের তরফে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদের আওতায় তার নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ক্ষমতার প্রয়োগ চাই। এর আগে আমরা মাদকে ১০ বছরের বেশি পুরোনো মামলা নিষ্পত্তিতে হাইকোর্টকে আদেশ দিতে দেখেছি। কিন্তু তা অকার্যকর থেকেছে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৯গ অনুযায়ী রাবেয়া খাতুনদের মামলা ৩৬০ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তাই এখানে আইনের যে লঙ্ঘন ঘটেছে, তা প্রমাণিত।