করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষা কার্যক্রমকে সামাল দেওয়ার জন্য অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছু কার্যক্রম শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে পরীক্ষা রয়েছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে। থাকার জায়গা হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর হল বা মেসের ওপর ভরসা করতে হয় এই শিক্ষার্থীদের। হল খোলা হয়নি কিন্তু পরীক্ষা শুরু হয়েছে—এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গার একমাত্র স্থান হচ্ছে বিভিন্ন মেস। সেখানে যদি আগের চেয়ে বেশি ভাড়া গুনতে হয়, তবে তা শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবেই বিবেচিত হবে।
শিক্ষার শহর হিসেবে রাজশাহীর একটি পরিচিতি রয়েছে। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনার মধ্যে আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা চলছে। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন বলছে, এতে অনেক শিক্ষার্থী রাজশাহীতে ফিরে মেসে থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থীও কোচিং করতে এসে মেসে থাকছেন। আবার অনেকে লেখাপড়া শেষ করে রাজশাহীতে মেসে থেকে চাকরির জন্য পড়াশোনা করছেন। রাজশাহীর মেসগুলো বছরের শুরুতে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ায় এসব শিক্ষার্থী স্পষ্টতই চাপের মুখে পড়েছেন।
শিক্ষার্থীরা পরিবারের টাকায় চলেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা করোনা পরিস্থিতি অনেক পরিবারকেই আর্থিক দুর্ভোগের মধ্যে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি মেস ভাড়া দেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর জন্য কঠিন। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী মেসগুলো নতুন বছর থেকে মাসিক সিট ভাড়া আগের তুলনায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের বক্তব্য হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভাড়া যেখানে কমার কথা, সেখানে বাড়ে কী করে?
মেসমালিকদের বক্তব্য হচ্ছে, মেস সংস্কারের কাজ করতে অর্থের প্রয়োজন। তা ছাড়া করোনাকালে যেসব শিক্ষার্থী মেসে তঁাদের সিট ধরে রাখেননি, সেই সিটগুলো খালি ছিল। সে সময়ে তঁাদের বিদ্যুৎ বিলসহ হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয়েছে। মেসমালিকদের এসব যুক্তি বিবেচনায় নিয়েও আমরা বলতে চাই যে করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি ভাড়া চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনার ভাড়া কমানো হয়েছে। বাস্তবতা ও মানবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তা হয়েছে। রাজশাহীর মেসমালিকদেরও শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। রাজশাহীর মেসমালিকদের যেহেতু একটি সমিতি রয়েছে, তাই সবাই মিলে একমত হয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে। কিছু সময়ের জন্য মেসমালিকদের বিদ্যুৎ বিল বা হোল্ডিং ট্যাক্সের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।