রাউজানে 'স্বপ্নের সেতু'

কবি বলেছেন, ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল/ গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার খৈয়াখালী ধম্মা বিজয়া রামবিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি পঞ্ঞ চক্ক মহাথের ছোট বালুকণা দিয়ে মহাদেশ না গড়লেও এলাকাবাসীর দানের টাকায় ১ হাজার ৪৬৫ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট প্রশস্তের সেতু নির্মাণ করে এক মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দানের টাকায় করা ১ হাজার ৪৬৫ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট প্রশস্ত সেতুটি সম্প্রতি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী এর নাম দিয়েছেন ‘স্বপ্নের সেতু’।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ও কদলপুর ইউনিয়নের মধ্যে দূরত্ব ৩০০ মিটার। মাঝখানে বিস্তীর্ণ ধানখেত ও ডোবা। ফলে এক ইউনিয়নের মানুষকে অন্য ইউনিয়নে যেতে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে যেতে হতো। বিশেষ করে শিশুশিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হতো। কিন্তু সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও সরকারি কোনো দপ্তর বা জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে সাড়া পাননি।

এ অবস্থায় এগিয়ে আসেন ওই বৌদ্ধ ভিক্ষু। সেতু বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ টাকা, যা তিনি গ্রামবাসীর কাছ থেকে তুলেছেন। শ্রমিক নিয়োগের পাশাপাশি এ কাজে ১০০ যুবক-তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন। গত বছরের ৩১ মার্চ প্রথম আলোতে ‘দানের টাকায় সেতু বানাচ্ছেন বৌদ্ধ ভিক্ষু’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর দেশ-বিদেশের অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি সেতুর কাজে সহায়তায় এগিয়ে আসেন। সেতু চালু হওয়ায় মানুষজনের চলাচলের পাশাপাশি কৃষকেরা উপকৃত হয়েছেন। তাঁরা এখন সহজে কৃষিকাজে ব্যবহৃত মালামাল, সবজি ও ধান আনা-নেওয়া করতে পারবেন। কদলপুর থেকে পাহাড়তলী ইউনিয়নের খৈয়াখালী উচ্চবিদ্যালয় ও খৈয়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে এক ঘণ্টা সময় লাগে শিক্ষার্থীদের। সেতু চালু হওয়ায় তারা ১০ থেকে ১৫ মিনিটে যেতে পারছে। তবে সেতুটির দুই পাশে বেষ্টনী নির্মাণের কাজ বাকি আছে।

ব্যক্তি উদ্যেোগে কিংবা দানের টাকায় এত বড় সেতু নির্মাণের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে আনন্দের খবর। আবার এ ঘটনা সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার দুর্বলতাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সরকারি প্রকল্পের আওতায় এমন রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণ করতে দেখা যায়, যেগুলোর ব্যবহার খুবই কম। প্রায় জনবিরল এলাকায় জাঁকালো সড়ক-সেতু নির্মাণের দৃষ্টান্তও কম নয়। সরকার সেতুটি নির্মাণে ভূমিকা রাখেনি। এখন অন্তত সেতুর দুই পাশের বেষ্টনীটি নির্মাণ করে দিক। যে বৌদ্ধ ভিক্ষু সেতুটি নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন, তাঁকে অভিনন্দন জানাই। ধন্যবাদ জানাই যাঁরা এই জন–উদ্যোগে স্বেচ্ছায় শরিক হয়েছেন তাঁদের। এ রকম দৃষ্টান্ত অন্যত্রও অনুসৃত হোক।