যশোরের গাছিদের শপথ

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের অনেক এলাকা ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য হারালেও ‘যশোরের যশ, খেজুর গুড়ের রস’ এখনো টিকে আছে। এখানকার খেজুর রস থেকে যে মানের ও স্বাদের গুড় তৈরি হয়, অন্য কোনো জেলায় তা হয় না। যশোরের উৎপাদিত খেজুর গুড় জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও যায়। বিশেষ করে শীতের সময় দূরদূরান্তের মানুষ খেজুর রস ও গুড়ের পায়েস খাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব থাকেন।

খেজুর রসের মৌসুম সামনে রেখে সরকারের এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় গাছিদের যে প্রশিক্ষণ ও উপকরণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা উৎসাহব্যঞ্জক। এতে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় খেজুর রস আহরণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। প্রথম আলোর কেশবপুর প্রতিনিধির পাঠানো খবরে বলা হয়, সম্প্রতি কেশবপুরে অনলাইন প্রতিষ্ঠান কেনারহাট ও শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্ক যৌথভাবে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। উপজেলার ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে কৃষি কমপ্লেক্সে আয়োজিত সাতবাড়িয়া ও ত্রিমোহিনী ইউনিয়নের ৭০ জন গাছি অংশ নেন। তাঁরা ভেজাল গুড় উৎপাদন করবেন না বলে শপথও নেন। উল্লেখ্য, খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি থাকায় একশ্রেণির গাছি ভেজাল গুড় তৈরি করেন। গুড়ের স্বাদ বাড়ানোর জন্য তাঁরা রাসায়নিক দ্রব্য ও চিনি মিশিয়ে থাকেন।

মির্জানগর গ্রামের গাছি খাদেম আলী বলেন, বেশি দামে ইটভাটায় জ্বালানি কেনায় খেজুরগাছের সংখ্যা কমে গেছে। অনেক চাষির
অভিযোগ, খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করে তাঁদের পোষায় না। অনলাইন নেটওয়ার্ক কেনারহাট কয়েক বছর ধরে যশোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে খেজুর গুড় কিনে বাজারে আনছে। ২০১৮ সাল থেকে ১ হাজার ৫০০ কেজি গুড় অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা এ পর্যন্ত ২০০ গাছি নিরাপদ রস ও বিশুদ্ধ খেজুর গুড় উৎপাদনের প্রশিক্ষণও দিয়েছে।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোরের ৮ উপজেলায় ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫১৪টি খেজুরগাছ আছে। প্রতিটি গাছে গড়ে ১ হাজার ৫০০ লিটার রস উৎপন্ন হয়। গত বছর জেলায় ৪ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন গুড়-পাটালি এবং প্রায় ২ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন রস উৎপন্ন হয়েছে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এসব গুড়-পাটালি দেশের অন্যান্য জেলায়ও যাচ্ছে।

যশোরের গাছিদের ভেজাল গুড় তৈরি না করার শপথ আমাদের উৎসাহিত করে। কিন্তু ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুরগাছ বিক্রি হয়ে গেলে কিংবা খেজুর গুড় তৈরি করে চাষিদের না পোষালে যশোরের যশ রক্ষা করা যাবে না।

অতএব, সরকারের উচিত ইটভাটার জন্য খেজুরগাছ বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ করা। প্রয়োজনে গাছিদের ঋণ দেওয়া হোক।