দেশের করোনা সংক্রমণের ৫০ দিন পার হয়ে গেছে দুই দিন আগে। এ সময় সংক্রমণ বৃদ্ধির যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে অনেকটা তা-ই ঘটছে। গতকাল বুধবার দেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৪১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৫৪৯। সেটাও ছিল আগের দিনগুলোর তুলনায় সর্বোচ্চ। এটা ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধির লক্ষণকে তুলে ধরছে।
দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও আগামী মে মাসজুড়ে সংক্রমণের পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে এবং আক্রান্তের সংখ্যা কত হতে পারে, তার একটি পূর্বাভাস দিয়েছেন। সেখানে রক্ষণশীল হিসাব যেমন রয়েছে, তেমনি শোচনীয় হলে আক্রান্তের সংখ্যা কত দাঁড়াতে পারে, সেই হিসাবও রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, রক্ষণশীল হিসেবে সংখ্যাটি ৪৮ থেকে ৫০ হাজার আর শোচনীয় হলে তা এক লাখে পৌঁছাতে পারে। এ ধরনের কোনো পূর্বাভাসই হয়তো শতভাগ মেলে না, কিন্তু এর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে, তার একটি ধারণা পাওয়া যায়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এ রকম পূর্বাভাস বা প্রজেকশন নিয়েই কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে।
মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা কত দাঁড়াতে পারে, একটি অনুমিত সংখ্যা এখন আমাদের সামনে রয়েছে। দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেহেতু দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাঁদের বিশেষজ্ঞ বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে পূর্বাভাসটি তৈরি করেছেন, তাই এর ওপর ভিত্তি করে সরকারের উচিত এখনই একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা কত ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে, সেই হিসাব-নিকাশ করে হাসপাতালের সংখ্যা ও শয্যাসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করতে হবে।
আমরা মনে করি, করোনা সংক্রমণ ঠেকানো ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা—এই দুটি মূল দিক মাথায় রেখে আগামী মে ও জুন মাসের একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এখন জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব খাতের সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে কাজটি করতে হবে। এখানে সমন্বয়ের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি লক্ষ করে আসছি। বিচ্ছিন্নভাবে সরকারের বিভিন্ন অংশ থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে থাকলে এবং একটি অন্যটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে এই দুর্যোগ মোকাবিলা কঠিন হবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একদিকে যেমন বৈশ্বিক দুর্যোগ, তেমনি প্রতিটি দেশের জাতীয় দুর্যোগও। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য এবং দেশের সব সামর্থ্যকে এক করা জরুরি। এখানেও আমাদের ঘাটতি রয়ে গেছে। বেসরকারি খাতসহ দেশের সামাজিক শক্তির অনেকটাই এই উদ্যোগের বাইরে রয়ে গেছে। অথচ এ ধরনের পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সব খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জাতীয় এই দুর্যোগে সরকার এই খাতকে যথাযথভাবে যুক্ত করতে পারেনি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোকেও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তেমনভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। অথচ বাংলাদেশে পরীক্ষিত ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রয়েছে। সরকারকে এটা বুঝতে হবে যে এককভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে।
সামনের মে মাসটি করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে আমাদের জন্য কঠিন সময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাই আমরা আশা করব সরকার সব অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়হীনতা থাকবে না, এটাই প্রত্যাশিত।