মধ্যপ্রাচ্যের পর মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এটি সুখের খবর নয়। কিন্তু এর চেয়েও বড় দুঃসংবাদ হচ্ছে বিমানের টিকিটের অতিরিক্ত দামের কারণে অনেকের ফেরত আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যেসব বিদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় এত দিন অবস্থান করছিলেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকার তাঁদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের ৩০ হাজার শ্রমিক আছেন। মালয়েশিয়া সরকার এর নাম দিয়েছে ‘ব্যাক ফর গুড’। মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব শ্রমিক এই কর্মসূচির আওতায় দেশে যাওয়ার সুযোগ পেতে চাইবেন, তাঁদের বিমানের টিকিটসহ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাতে হবে। সরকারের কাছ থেকে স্পেশাল কার্ড পাওয়ার পর শ্রমিকদের কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস নিতে হবে। মালয়েশিয়া এই ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ৩১ ডিসেম্বর।
সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ফেরার সময় আছে তিন সপ্তাহের কম। বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফেরত আনতে ইতিমধ্যে বিমান বাংলাদেশ ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে অতিরিক্ত ১৬টি ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তারা টিকিটের দাম যা নির্ধারণ করেছে, তা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। ইকোনমি ক্লাসে লাগেজ ছাড়া ১ হাজার ২৯৪ রিঙ্গিত, বাংলাদেশের টাকায় যা ২৬ হাজার টাকার বেশি। আর লাগেজসহ তা বাংলাদেশি টাকায় ৩৫ হাজার টাকার বেশি। বিজনেস ক্লাসে এই ভাড়া দ্বিগুণের অনেক বেশি পড়ছে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এ ধরনের ওয়ানওয়ে টিকিট ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় পাওয়া যেত।
ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় ফিরতে বর্তমানে টিকিট-সংকট চলছে। ওয়ানওয়ের টিকিট ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ বিশেষ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ওয়ানওয়ের জন্য যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোতে সেই ভাড়া দ্বিগুণ। চাহিদা বাড়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই ভাড়া বেড়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যাঁরা মালয়েশিয়া থেকে সব গুটিয়ে বিদায় নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের পক্ষে এই পরিমাণ ভাড়া দেওয়া কতটুকু সম্ভব?
সরকার প্রত্যেক বিমানের যাত্রীর টিকিটে ১০ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক বিমানের টিকিট কিনবেন, তাঁরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মালয়েশিয়া ফেরত সব শ্রমিক চাইলেও বিমান বাংলাদেশে আসতে পারবেন না। বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো থেকে টিকিট কাটতে হলে তাঁদের মাত্রাছাড়া বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, অনেকের সেই সামর্থ্য না–ও থাকতে পারে।
প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থে আমাদের অর্থনীতি পুষ্ট হচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত স্ফীত হচ্ছে, সেই শ্রমিকদের দুর্দশার সময়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই। সরকার শুধু বিমান বাংলাদেশের টিকিটে ১০ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা মনে করি, মালয়েশিয়া থেকে যে শ্রমিকদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরতে হবে, তাঁদের সবার জন্যই ভর্তুকির ব্যবস্থা করা উচিত। সরকার এ ক্ষেত্রে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
মালয়েশিয়া থেকে যে শ্রমিকেরা ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁরা এমনিতেই বিপদগ্রস্ত। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় অনেকেই মালয়েশিয়ায় লুকিয়ে থেকেছেন। অনেকে কম মজুরিতে কাজ করেছেন। তাঁদের পক্ষে টিকিটের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া শোধ করা কঠিন হবে। এ অবস্থায় বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর টিকিটের দাম বিমান বাংলাদেশের টিকিটের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা গেলে শ্রমিকেরা স্বস্তি পাবেন।