মাছ উৎপাদনে ধারাবাহিক সাফল্য

এই মহামারিকালে বাংলাদেশের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক একটি খবর প্রকাশিত হলো গতকাল প্রথম আলোর শেষ পাতায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মৎস্যসম্পদ বিষয়ে সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেল, বাংলাদেশ মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। বিশ্বের যেসব দেশে মৎস্য উৎপাদনের হার বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় থেকে এবার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা আগের মতোই পঞ্চম স্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।

এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে মূলত ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি। দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়গুলোতে গত এক যুগে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এর একটা কারণ ইলিশ আহরণে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে। প্রজনন ঋতুতে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা আগের তুলনায় বেশি কার্যকর হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলেদের সচেতনতা বেড়েছে, সরকারি প্রশাসনের নজরদারিও ব্যবস্থাও আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে। এরপরে রয়েছে পুকুর ও ছোট জলাশয়ে মাছ চাষের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অগ্রগতি। এ ক্ষেত্রে দেশের মৎস্যবিজ্ঞানীদের বিরাট অবদান রয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন, যেগুলো চাষিরা পুকুর ও ছোট জলাশয়ে পরিকল্পিতভাবে ও বাণিজ্যিক লক্ষ্যে উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির দেশি মাছের আধুনিক চাষপদ্ধতি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং চাষিরা সেগুলো উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন বলে ওই মাছগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

মৎস্য উৎপাদন ক্রমে বৃদ্ধির এ খবর বিশেষত এই কারণে সুখবর যে এই মাছ থেকে আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠীর আমিষের ঘাটতি ক্রমে দূর হচ্ছে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মোট প্রাণিজ আমিষের চাহিদার অর্ধেকের বেশি অংশ এখন পাওয়া যাচ্ছে মাছ থেকে। আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর, বিশেষত নারী ও শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার এখনো বেশি। তা কাটিয়ে উঠতে মাছের অবদান দিন দিন বাড়ছে। তবে মাছের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এবং সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণনব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতার কারণে ভোক্তাপর্যায়ে অনেক প্রজাতির মাছের দাম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। এদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন, যেন মাছের দাম সর্বসাধারণের নাগালের মধ্যে আনা যায়। তা ছাড়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বাস্থ্যসম্মত মাছের খাবার নিশ্চিত করা। কারণ, অনেক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীর অভিমত, মাছের খাবারের কাঁচামাল হিসেবে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও বিষাক্ত প্রাণিজ বর্জ্য ব্যবহার করা হয়, যেগুলো মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।