২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মাইকের ব্যবহার সীমিত করা

এমন অনেক কাজ আছে যা আইনত দণ্ডনীয় কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নৈমিত্তিক ভিত্তিতে চর্চিত হওয়ার বদৌলতে তা সামাজিক কিংবা প্রশাসনিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয় না। দিনের পর দিন সেসব কাজ জনগণ নিয়তি হিসেবে মেনে আসছে। যখন-তখন লোকালয়ে মাইকে তীব্র আওয়াজ তুলে বক্তৃতা-ভাষণ দেওয়া কিংবা বাণিজ্যিক প্রচার চালানো সেই ধরনের একটি কাজ। এসব শব্দবাজি যে আসলে শব্দসন্ত্রাস—তা এর শিকার হওয়া ব্যক্তিরাও উপলব্ধি করার ক্ষমতা দৃশ্যত হারিয়ে ফেলেছেন। 

তবে কানের ক্ষতির কথা যে মুহূর্তে কেউ কানে তুলতে চাইছে না, সে মুহূর্তে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন প্রশংসনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। সেখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাইকে উচ্চ শব্দে বিভিন্ন প্রচারণা চলছিল। কান ঝালাপালা করা এই শব্দসন্ত্রাস থেকে জনগণকে কিছুটা রেহাই দিতে তারা বেলা তিনটার আগে পর্যন্ত সব ধরনের প্রচার বন্ধ ঘোষণা করেছে। 

নালিতাবাড়ী উপজেলায় প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য ও সেবার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মাইকিংয়ে নামছিল বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে রয়েছে নতুন ধান, শাকসবজির বীজ, বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রচারণা, কম মূল্যে লাইট বিক্রি, ‘বিশাল’ গরু-মহিষ জবাই, ঢাকাগামী পরিবহনের স্পেশাল সার্ভিস, মোটরসাইকেলের অফার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির কোচিং—ইত্যাদি। ভোর থেকে রাত অবধি মাইকে এই প্রচার চলছিল। মাইকিংয়ের ক্ষেত্রে হাসপাতাল, ক্লিনিক, সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজের পরিবেশ কিছুই মানা হচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার প্রথম আলো অনলাইনে ‘সুখবরে অতিষ্ঠ মানুষ’ ও গতকাল ছাপা সংস্করণে ‘মাইকিংয়ে কান ঝালাপালা’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান জনদুর্ভোগ বন্ধে ঘোষণা দেন, সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত এমন মাইকিং করা যাবে না। তিনটার পর থেকে তুলনামূলকভাবে স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালতের কার্যক্রম কমে আসে। ফলে ওই সময় থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এমন প্রচারণা চালানো যাবে। 

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী, কোথাও কোনো হাসপাতাল থাকলে সেটি ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। সেসব জায়গায় উচ্চশব্দে মাইক বাজানো যাবে না। নালিতাবাড়ী উপজেলা প্রশাসন যে ঘোষণা দিয়েছে তা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা হলে অন্তত কিছু সময়ের জন্য পৌরবাসী স্বস্তি পাবে। 

শব্দদূষণের কারণে সরাসরি কানের অসুখ ছাড়াও বাড়তে পারে ব্লাডপ্রেশার, দুশ্চিন্তা, উগ্রতা বা অ্যাগ্রেসিভনেস। কানে ভোঁ–ভোঁ শব্দ বা টিনিটাস হতে পারে। ঘুম কমে যাওয়া বা মানসিক অবসাদ হতে পারে। এতে শিশুদের স্বাভাবিক বুদ্ধির বিকাশ বাধা পায়। শব্দদূষণজনিত এই ক্ষতির মাত্রা যতক্ষণ না জনগণ এবং সরকার সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারছে, ততক্ষণ দূষণাসুর বধ হওয়ার নয়।