সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ধানের চারা উৎপাদনের জন্য কৃষকদের ভাসমান বীজতলা তৈরির খবরটি সত্যিই আশাজাগানিয়া একটি খবর। বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সিরাজগঞ্জের অনেক এলাকায় প্রতিবছরই বন্যা হয়। অনেক জায়গাজমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। এ কারণে কৃষকেরা ধানের চারার বীজতলা তৈরি করা নিয়ে সংকটে পড়েন। চারার অভাবে সময়মতো ধানের আবাদ করতে ব্যর্থ হন তাঁরা। এ বছর যাতে সে ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সে জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেক কৃষক ভাসমান বীজতলা তৈরি করেছেন। এতে করে ধান উৎপাদন নিয়ে তাঁদের আর সমস্যায় পড়তে হবে না।
ভাসমান বীজতলা তৈরিতে কৃষকের ব্যয় বলতে গেলে নেই। মূলত কচুরিপানাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি ভেলার ওপর মাটি দিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়। ধানের বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পর এই ভাসমান বীজতলায় ছিটিয়ে দিতে হয়। সেখানে জমিতে রোপণের উপযোগী চারা উৎপাদন হতে ২০ থেকে ২৫ দিন লাগে। পরে চারাগুলো জমিতে রোপণ করা হয়।
বাংলাদেশ বন্যাপ্রবণ একটি দেশ। প্রায় প্রতিবছরই এখানে বন্যা হয়। তখন বন্যার কারণে অনেক এলাকার বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া ঝড়, অতিবৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতেও বহু বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে যথাসময়ে ফসল উৎপাদনে বিলম্ব হয়। দেখা দেয় ফসলের ঘাটতি। ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রান্তিক কৃষকেরা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভাসমান বীজতলা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই আমরা মনে করি।
১০ মিটারের একটি ভাসমান বীজতলায় এক কেজি অঙ্কুরিত বীজ ছিটানো সম্ভব। এ থেকে উৎপাদিত চারা এক বিঘা জমিতে রোপণ করা সম্ভব। পানির ওপর ভেসে থাকার কারণে এই বীজতলায় পানি সেচেরও দরকার হয় না। দেশের অনেক জেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরি করে ধানের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এ বীজতলায় ধানের চারা উৎপাদন ছাড়াও পেঁপে, লাউ, কুমড়া, বেগুন, করলাসহ বিভিন্ন সবজির চারাও উৎপাদন সম্ভব। দেশের অনেক কৃষক ভাসমান বীজতলায় সবজির চারা উৎপাদন করে লাভবান হয়েছেন।
ভাসমান বীজতলা ছাড়াও আরেক ধরনের বীজতলা তৈরি করে চারা উৎপাদিত হচ্ছে, যাকে বলে ডাগোপ বীজতলা। বাড়ির উঠান, পাকা বারান্দা বা যেকোনো শুকনো জায়গায় চারদিকে মাটি, কাঠ, ইট, কলাগাছের বাকল দিয়ে এই বীজতলা তৈরি করা হয়। সময়মতো ফসল উৎপাদনের জন্য সারা দেশে এসব বীজতলা কৃষকের মাঝে জনপ্রিয় করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। প্রয়োজনে কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।