বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা পাঁচ দিন ধরে শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে রাস্তায় আন্দোলন করলেও উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে বসার প্রয়োজন বোধ করেননি, এটি দুর্ভাগ্যজনক। এতে শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার প্রতি তাঁর এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাই প্রকাশ পেয়েছে।
১৬ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৫ জুন থেকে আন্দোলন করছেন, যার মধ্যে রয়েছে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালকের নিয়োগ বাতিল, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়ন প্রোগ্রাম চালু রাখা, যাবতীয় লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও ন্যাম ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা। এ ছাড়া নির্বিচারে ক্যাম্পাসের গাছ কাটা বন্ধ, ক্যাম্পাসকে ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা, বুয়েটের প্রবেশমুখে ফটক নির্মাণ, ২০০২ সালে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ছাত্রী সাবেকুন্নাহার সনির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের নামকরণ, ব্যায়ামাগার আধুনিকায়ন এবং পরীক্ষার খাতায় রোল নম্বরের পরিবর্তে কোড সিস্টেম চালুর কথাও বলেছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এসব দাবি অযৌক্তিক নয়। তাঁদের প্রতিটি দাবিই ন্যায়সংগত। শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন, সে দাবি শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদেরও। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়লে সবচেয়ে লাভবান হবে শিক্ষা। শিক্ষার উন্নয়নে নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা যাবে না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা যেসব লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার দাবি করেছেন, তাতে শিক্ষার্থী ও প্রশাসন উভয়ের সময় ও শ্রম বাঁচবে।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের ১৬ দফা দাবির সবগুলো নিশ্চয়ই এখনই বা একসঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে উপাচার্যের আলোচনা করতে বাধা কোথায়? তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রধান নন, একজন শিক্ষকও। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে তাঁকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে রেজিস্ট্রার ও একজন ডিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন উপাচার্যের সঙ্গেই বসতে আগ্রহী, তখন তাঁর উচিত তাঁদের সঙ্গে অবিলম্বে বৈঠকে বসা। পাঁচ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি অপূরণীয়। এই ক্ষতি আর কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না।
ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক পদে নিয়োগ নিয়েও বিতর্ক কাম্য নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি, পদটিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার ওই পদ থেকে সরেননি, তাঁকে সরানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। স্বেচ্ছায় হোক আর চাপে পড়ে তিনি পদত্যাগ করে থাকুন, সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব।
ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নতুন পরিচালক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উপাচার্য কিছুটা ‘বিব্রত’। কিন্তু এই ‘বিব্রত’ অবস্থা কাটানোর উপায় অফিসে গরহাজির থাকা নয়। শিক্ষার্থী আন্দোলনের মুখে উপাচার্যের নিজের কার্যালয়ে না যাওয়া একধরনের পলায়ন মনোবৃত্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনকে এ অবস্থা থেকে সরে আসতে হবে। আমরা চাই, বুয়েটে অবিলম্বে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। তবে উদ্যোগটা উপাচার্যের কাছ থেকেই আসতে হবে।