বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে থাকা পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই, এমন ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশটি প্রশংসার যোগ্য। এই নির্দেশ বুড়িগঙ্গার পানিদূষণ রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি। কেননা, ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশির ভাগই ডায়িং কারখানা, যেগুলোর বর্জ্য বুড়িগঙ্গা–দূষণে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে আসছিল।
বুড়িগঙ্গা দেশের প্রধান নদীগুলোর একটি। কিন্তু নদীটি এখন ভয়াবহ দূষণের শিকার। মানববর্জ্যের পাশাপাশি শিল্পবর্জ্য, ট্যানারিবর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, ইটভাটা, পলিথিন ইত্যাদির কারণে বুড়িগঙ্গা দূষিত বর্জ্যের আধারে পরিণত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা–দূষণের কুফল হিসেবে পাশের এলাকাগুলোয় ছড়িয়ে পড়ছে কলেরা, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগ। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এ নদীর পানিদূষণ রোধে যাদের মূল ভূমিকা পালন করার কথা, তারা তেমন কিছু করছে না। এমনকি আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর এ ব্যাপারে কোনো হেলদোল নেই।
বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০১০ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১১ সালে ৩ দফা নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় বর্জ্য ফেলা বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এবং এই নদীতে সংযুক্ত সব সুয়ারেজ লাইন ও শিল্পকারখানার বর্জ্য নিঃসরণের লাইন ছয় মাসের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশনা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওয়াসা, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এ ব্যাপারে খুব কম পদক্ষেপই নিয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় গত ৩০ এপ্রিল সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি। শুনানির পর ওই সব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে বিবাদীদের আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হতাশাজনক ব্যাপার হচ্ছে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ব্যাপারে আদালতকে অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বুড়িগঙ্গায় কোনো সুয়ারেজ সংযোগ নেই। অথচ বিআইডব্লিউটিএর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুড়িগঙ্গায় ৬৮টি সুয়ারেজ সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি সংযোগ ওয়াসার। আদালত এখন আদেশ অমান্য ও অসত্য তথ্য দেওয়ায় কেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।
নদ-নদী সুরক্ষার জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নদী রক্ষা কমিশন অন্যতম। কিন্তু আমরা লক্ষ করেছি যে নদ-নদীর দূষণ রোধে কমিশন খুব একটা ভূমিকা পালন করছে না। করলে এভাবে বুড়িগঙ্গার তীরে এত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠতে পারত না। আমরা আশা করব, নদ-নদী রক্ষা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, দেশের অন্যান্য নদ-নদী রক্ষায়ও তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।