বিদ্যালয় ভবনে ফাটল

নির্মাণের চার মাসের মাথায় শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৪১ নম্বর চরযাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার যে খবরটি প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। খবরটি জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলোর গাফিলতি এবং বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম তুলে ধরেছে।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিদ্যালয়ের টিনশেড মূল ভবনের পাশে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প-৩-এর আওতায় ৭৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪০০ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। চারতলা ভবনটির একতলার নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চার কক্ষের ভবনটি বুঝিয়ে দেয় মেসার্স আবদুল মান্নান লস্কর নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর কিছুদিন পর থেকেই ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়। এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভবনটি। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেখানে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কী করে এই ভবনে পাঠদান করা হচ্ছে? এসব দেখার দায়িত্ব জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের। তারা তাহলে কী করছে? ভবনটি সংস্কারের বা বিকল্প ব্যবস্থায় পাঠদানের কোনো উদ্যোগ নেই কেন? ভবন ধসে যদি হতাহতের ঘটনা ঘটে, তাহলে তার দায় কি তারা নেবে?

এসব গাফিলতি বা অনিয়মের জন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই আজ সারা দেশের বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের অবস্থা করুণ। নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। গত কয়েক বছরে ভবন ধসে শিক্ষার্থী হতাহতের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু অনিয়ম ও গাফিলতির জন্য কেউ শাস্তি পেয়েছেন, এমনটা শোনা যায়নি।

স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে সর্বোচ্চ মানই নিশ্চিত করার কথা। এগুলোর নির্মাণকাজ তদারকির জন্য প্রকৌশলীসহ বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাও রয়েছেন। কিন্তু কতিপয় কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের লোভের কারণে ভবন নির্মাণে যথাযথ মান নিশ্চিত হয় না।

শিক্ষা খাতে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও তার বড় অংশ অপচয় হয় দুর্নীতির কারণে। এ অপচয় বন্ধ করা সরকারের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। শুধু সরকারি অর্থে নির্মিত বিদ্যালয় নয়, যেখানেই সরকারি নির্মাণকাজ, সেখানেই জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। মানসম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। বিশেষ করে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় কাজ দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।