করোনার শুরু থেকে বিদেশযাত্রী কিংবা বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসা বিমানযাত্রীদের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি কাটছে না। কখনো স্বাগতিক বা উদ্দিষ্ট দেশের বিধিনিষেধ, কখনো পরিবহন সংস্থার কড়াকড়ির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
খালিজ টাইমস–এর খবরে বলা হয়, দুই ধরনের কোভিড সনদের বাধ্যবাধকতার কারণে বাংলাদেশসহ পাঁচটি দেশের যাত্রীরা শেষ গন্তব্যস্থল হিসেবে দুবাইয়ে যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটস। অপর চারটি দেশ হলো নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। ছুটিতে দেশে এসে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন কয়েক হাজার প্রবাসী শ্রমিক। সেখানে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এমিরেটসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নতুন ভ্রমণবিধিতে বলা হয়েছে, যাত্রা শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআরে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসতে হবে এবং কিউআর কোডসংবলিত সেই কোভিড নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, উড্ডয়নের ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে তাঁদের র্যাপিড পিসিআর টেস্টের ফল নেগেটিভ আসতে হবে এবং কিউআর কোডসংবলিত সেই কোভিড নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখতে হবে। এসব দেশ থেকে ট্রানজিট যাত্রীরা দুবাই হয়ে যেতে পারবেন, তবে তাঁদেরও সঙ্গে কোভিড নেগেটিভ সনদ রাখা জরুরি।
বিমানবন্দরে র্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ২৩ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, অনুমতি পেলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে র্যাপিড পিসিআর ল্যাব বসানোরও প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেসব অজুহাত খাড়া করছে, তা কানাকে হাইকোর্ট দেখানোর মতো। তাদের ভাষ্য হলো মেশিনের স্পেসিফিকেশন না থাকা ও দরপত্রের কারণে মেশিন কেনার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।
কমপক্ষে ছয় হাজার প্রবাসী সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায়। দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে, অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হলে কাজ হারাবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে র্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা করার দাবিতে আন্দোলন করছেন আরব আমিরাতপ্রবাসীরা। বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন করা ছাড়াও প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়েও স্মারকলিপি দিয়েছেন। শুক্রবার বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন সরকারদলীয় সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
করোনা মোকাবিলায় কোন ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সে সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মপরিকল্পনা আছে বলেও মনে হয় না। কোনো সমস্যা সামনে এলে তারা নড়েচড়ে বসে। আবার সেই সমস্যা চলে গেলে হাত গুটিয়ে থাকে। আমরা এমিরেটসের এ নিষেধাজ্ঞা জারির সমালোচনা কঠোর ভাষায় করতে পারি। দুবার করোনা পরীক্ষার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান হবে না।
অবিলম্বে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার সঙ্গে বসে এ বিষয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসুন। নিষেধাজ্ঞার কারণে একজন প্রবাসী নাগরিকও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই। আর শেষ কথা হলো, দ্রুততম সময়ে বিমানবন্দরে আরটি–পিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।