কী বর্বরোচিত কাণ্ড! বাসের একজন সহকারী ভাড়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে হত্যা করেছেন। দেশে কি আইনকানুন বলে কিছু নেই?
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাজধানীর জয়কালী মন্দিরের কাছে ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে গ্রিন বাংলা পরিবহনের একটি বাসের সহকারী ইরফান আহমেদ নামের এক যাত্রীকে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে তিনি মারা যান। একই দিন মগবাজারের মোড়ে আজমেরী গ্লোরি পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে পিষ্ট হয়ে কিশোর মো. রাকিবুল মারা যায়। সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে মাস্ক বিক্রি করছিল। দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে একটি অপরটিকে টেক্কা দিতে গেলে ওই কিশোর মাঝখানে পড়ে নিহত হয়। এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই।
এরপরও সড়কে মৃত্যু থেমে থাকেনি। গতকাল সকালে যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন মারা যান। এ খবর পেয়ে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এতে রামপুরার আশপাশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠাসহ ১১ দফা দাবি গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের আলটিমেটাম দেওয়া ছিল। কিন্তু দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই আমরা আবার সড়কে।’
কেবল পরিবহনমালিক ও শ্রমিকদের প্রতি তাঁদের এ বার্তা নয়। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের প্রতিও। এভাবে সড়কে বিশৃঙ্খলা–জবরদস্তি আর কত দিন চলবে? সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
২৯ নভেম্বর রামপুরা সেতুর কাছে দুই বাসের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী মারা গেলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামেন। পরে পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্তু সে নিজের পরীক্ষার ফল দেখে যেতে পারল না। এভাবে সড়কে, নৌপথে কত স্বপ্ন হারিয়ে যায়, তার খোঁজ কি কর্তৃপক্ষ রাখে?
এই যে সড়কে একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছে, একে নিছক দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কেউ ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটালে তা হত্যার শামিল। ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইনে ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন। উদ্বেগের বিষয় হলো পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকেরা আইন বাস্তবায়ন হতে দেননি। আইনের বিরুদ্ধে তাঁরা ধর্মঘটও করেছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। সড়ক ও সেতু দপ্তরের মন্ত্রী প্রায় প্রতিদিন রাজনৈতিক বক্তৃতা দিলেও সড়ক নিয়ে কোনো কথা বলেন না।
সড়ক পরিবহনে পদে পদে অনিয়ম। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেউ আইন জানেন না, তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তাঁরা জানেন, আইন ভঙ্গ করলে কোনো শাস্তি পেতে হবে না। এ কারণে বারবার আইন ভঙ্গ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে যেসব নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা-ও তাঁরা অগ্রাহ্য করে চলেছেন।
নিরাপদ সড়ক থাকলে কেবল যাত্রীসাধারণই নিরাপদ থাকবেন না; গণপরিবহনের কর্মীরাও নিরাপদ থাকবেন। সরকার যে আইন করেছে, তা অগ্রাহ্য করতে পারে না। যিনি বাস থেকে ফেলে যাত্রীকে হত্যা করেছেন, তাঁকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ করা হোক। সেই সঙ্গে নিহত যাত্রীর পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।