ভরা মৌসুমেও চালের দাম এত বেশি কেন, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে অনুমোদন ছাড়াই যেসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালের ব্যবসা করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া এবং চালের অবৈধ মজুত ঠেকাতে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কিন্তু এসব অভিযান কতটা সুফল বয়ে আনবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। যাঁদের আড়ত থেকে চাল উদ্ধার করা হচ্ছে, তাঁরা মূলত মাঝারি ও ছোট ও ব্যবসায়ী। বড়দের বাদ দিয়ে ছোটদের ধরলে ফল পাওয়া যাবে না।
মে মাসের শুরুতে একজন ক্রেতা যে দামে চাল কিনেছেন, মাসের শেষে এসে চাল কিনতে তাঁকে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির এই প্রবণতা শুধু দেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়।
তবে সরকারের দাবি, বাজারে প্রচুর চাল আছে। সরকারি গুদামের মজুতও সন্তোষজনক। দাম বাড়া নিয়ে বাদানুবাদ চলছে। খাদ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী দুষছেন ব্যবসায়ীদের। আবার ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিচ্ছেন।
কিন্তু বাজার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গমের দাম বাড়ার আগে থেকেই চালের দাম বাড়তির দিকে। সে ক্ষেত্রে গমের কিছুটা প্রভাব থাকতে পারে, পুরোপুরি নয়। আসলে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার সুযোগে প্রভাবশালীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এই প্রভাবশালীদের মধ্যে যেমন কিছু বড় ব্যবসায়ী আছেন, তেমনি আছেন মিলমালিক ও আড়তদারেরা।
চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি বৃহৎ কোম্পানির কারসাজি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে; যঁাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বা নিচ্ছে না। মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজারের ওপর সরকারের নিবিড় নজরদারি থাকা দরকার। বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
সীমিত আয়ের মানুষ যাতে চাল কিনতে পারেন, সে জন্য খোলাবাজারে স্বল্প দামে চালের বিক্রি বাড়াতে হবে। এখন দরিদ্রদের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় গ্রামাঞ্চলে ৬২ লাখ ৫০ হাজার পরিবারের কাছে স্বল্প মূল্যে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এর আওতা আরও বাড়ানো দরকার। তবে এরই মধ্যে এ চালের বিক্রয়মূল্য প্রতি কেজি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা করা হয়েছে। নগরের দরিদ্রদের জন্যও এ ধরনের কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন।
সরকারি গুদামে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল আছে। বাজারেও প্রচুর চাল। এটা স্বস্তিদায়ক। তবে সরকারের মাথায় রাখতে হবে চাহিদা বাড়লে মজুত কমতে পারে। সে ক্ষেত্রে মজুত বাড়াতে বিকল্প চেষ্টা নিতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকেও চাল আমদানি করতে হবে; যাতে স্বার্থান্বেষী মহল বাড়তি সুবিধা নিতে না পারে।
সরকারের উচিত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে অবিলম্বে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও আলোচনা করা আবশ্যক বলে মনে করি। সেই সঙ্গে খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়গুলোর কাজে সমন্বয় থাকতে হবে। সমস্যা ঘাড়ের ওপর পড়লে তড়িঘড়ি করে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজতে হবে।