মৌসুমি বর্ষণের অবিশ্রাম ধারা আসতে ঢের দেরি। এখন শীতকাল নামছে। খাল-বিল, নদী-নালার পানি কমছে। কোথাও বন্যার আশঙ্কা নেই। তবু আশ্বস্ত হতে পারে না হাওর অঞ্চলের বাসিন্দারা। কারণ, প্রকৃতি আর আগের মতো নিয়ম ধরে চলে না। ২০১৭ সালের মে মাসে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে হাওরের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। গোটা হাওর অঞ্চলে পানি ঢুকে পোয়াতি আর প্রসূতি বোরো ধান ডুবে গিয়েছিল। খাবারের অভাবে দিশেহারা হয়েছিল মানুষ ও গবাদিপশু।
সেই অভিজ্ঞতা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ তৈরি করেছে। গত বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার কাইলানী ও টগার হাওরের একটিতে তিন কিলোমিটার ও অপরটিতে সাত কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছে পাউবো। দুই সপ্তাহ ধরে সেই বাঁধ দুটি কেটে সড়ক নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এতে অকালবন্যায় হাওরে পানি ঢুকে বোরো ফসলহানির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষক ও পাউবো কর্তৃপক্ষ। সবচেয়ে উদ্বেগের কথা হলো, এই কাজে সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। পাউবো বলছে, তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শ না করেই এলজিইডি বাঁধের ওপর রাস্তা বানাচ্ছে। এলজিইডি এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
আর মাস তিনেক পরেই হাওর ভরে উঠবে বোরো ফসলে। ঘর পোড়া গরুর মতো তাই হাওরবাসী আচমকা বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তির ভয়ে থাকে। জানা যাচ্ছে, গত বোরো মৌসুমে পাউবোর আওতায় এই দুটি বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতকাজ করা হয়েছে। এলজিইডি হাওর অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই দুই বাঁধে দুই সপ্তাহ ধরে সড়ক নির্মাণ করছে। সেখানে দেখা গেছে, ফসল রক্ষা বাঁধের উচ্চতাকে খর্ব করে, অর্থাৎ বাঁধের স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে নিচু করে সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। এতে অকালবন্যায় সড়কের ওপর দিয়ে পানি ঢুকে হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় চাষিরা দাবি করেছিলেন, বাঁধের ওপর যদি রাস্তা করতেই হয়, তাহলে বাঁধের চেয়ে আরও দুই ফুট উঁচু করে মাটি কেটে সড়ক নির্মাণকাজ করা হোক। কিন্তু এতে কেউ কান দিচ্ছে না। এতে সাধারণ কৃষকেরা মনে করছেন, ‘যেইভাবে সড়কটার কাম অইতাছে এইভাবে সড়কটা দিয়া ফসল রক্ষার জন্য কুনু উপকার অইতোনা। হানি আইলেই ফসলের বারোডা বাইজা যাইব।’
পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, বাঁধ কেটে সড়ক নির্মাণকাজে কোনো রকম অনুমতি নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। কোথাও উঁচু, আবার কোথাও নিচু করে সড়ক নির্মাণকাজ করায় এ নিয়ে হাওরের আগামী বোরো ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে বাঁধের ওপর সড়ক নির্মাণের ভালোমন্দ দিক সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্লেষণ করা দরকার এবং সেই মতো এগোনো উচিত হবে।