বসুরহাটে ‘যুদ্ধবিরতি’

সম্পাদকীয়

নোয়াখালীর বসুরহাট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বুধবার ২৪ ঘণ্টার জন্য সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। পরে ১৪৪ ধারার মেয়াদ না বাড়ালেও ৩০০ পুলিশ (১০০ জন করে প্রতি পালায়) ও র‍্যাবের ১৬ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বসুরহাটে থাকা বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ ইমরান জানান, পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ অবস্থান করছে। পাশাপাশি পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে। টহল দিচ্ছেন র‌্যাবের সদস্যরাও।

গত মঙ্গলবার বিকেলে বসুরহাটের রুপালি চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা চলাকালে সভাস্থলের কয়েক শ গজ দূরে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে সভা আয়োজনকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার জের ধরে রাত সাড়ে ৯টায় উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ হয়েছে। ওই সংঘর্ষে মিজানুর রহমানের সমর্থক শ্রমিক লীগের নেতা আলাউদ্দিন (৩২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন, যাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, স্থানীয় প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপে যুদ্ধক্ষেত্র এখন শান্ত। বুধবার রাত পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছিল। বসুরহাটে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ অনেক পুরোনো। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পৌরসভার মেয়র মির্জা আবদুল কাদের, অপর পক্ষে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ওরফে বাদল। বসুরহাট আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রথমে খুন হন সাংবাদিক মুজাক্কির। সেই খুনের রেশ না কাটতেই গত মঙ্গলবার মারা গেলেন আলাউদ্দিন নামে শ্রমিক লীগের এক কর্মী।

বসুরহাট পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধের সূত্রপাত হলেও তা প্রকট আকার নেয় নির্বাচনের পর। এক পক্ষ কর্মসূচি নিলে অপর পক্ষ বাধা দেয়, হামলা চালায়। সেই হামলার জবাবে পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। বসুরহাটে পুলিশ ও র‌্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকলেও বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের আতঙ্ক এখনো কাটছে না। ব্যবসায়ীরা জানান, দুই মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা নানা রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বসুরহাটে যে সংঘাত চলে আসছে, দুটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল, এর দায় প্রশাসন কিংবা ক্ষমতাসীন দলটি এড়াতে পারে না।

আওয়ামী লীগ নিজেকে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল দল বলে দাবি করে। এটি কি শৃঙ্খলার নমুনা? সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার ঘটনায় একজন এবং শ্রমিক লীগের কর্মী আলাউদ্দিন হত্যার ঘটনায় ২৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু এর বাইরেও অপরাধী চক্রের কেউ আছেন কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব প্রায়ই আওয়াজ তোলে যে অপরাধ করে কেউ ছাড় পাবে না। অথচ আমরা লক্ষ করছি, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকা নেতা-কর্মীরা নানা অপকর্ম করেও পার পেয়ে যান।

বসুরহাট প্রশাসনের এ কঠোর অবস্থান যেন লোকদেখানো ও সাময়িক না হয়। যারাই সেখানে শান্তি বিনষ্ট করেছে, হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ হতে হবে।