দেশের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কয়েকটি জেলায় যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তাতে ইতিমধ্যে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বৃহত্তর সিলেট-মৌলভীবাজার এলাকার বন্যায় পানিবন্দী প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের দুর্দশার কোনো উন্নতি ঘটেনি। কারণ, সেখানে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা প্রভৃতি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে গত বুধবার বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। আষাঢ়ের এই শেষ দিনগুলোতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তার সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস যোগ করলে এ বছর আমাদের বড় আকারের বন্যা মোকাবিলা করার ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে দুর্যোগের মাত্রা নিরূপণ করা হয় প্রাণহানির সংখ্যার নিরিখে। মানুষের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সরকারি কর্তৃপক্ষ কোনো দুর্যোগকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে চায় না। এখন বন্যাদুর্গত এলাকাগুলো থেকে কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর আসেনি বলে আমরা যদি এই দুর্যোগের মাত্রা উপলব্ধি করতে না পারি, তবে তা অচিরে আরও বড় মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
এখনই দেখা যাচ্ছে লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় পানিবাহিত রোগব্যাধি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শিশুরা। উপরন্তু বন্যার কারণে কৃষিকাজ ও অন্যান্য জীবিকা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম; অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষ এখন বেকার।
এই পরিস্থিতি যদিও এখন পর্যন্ত কয়েকটি জেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তবু এটা একটা বড় দুর্যোগই বটে। কিন্তু এই দুর্যোগের শিকার কয়েক লাখ পরিবারের মানুষের জন্য যে ত্রাণসহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। দৃষ্টান্তস্বরূপ, গাইবান্ধা জেলার ৫২ হাজার পরিবারের ২ লাখ ৯০ হাজার মানুষের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ১৮ লাখ টাকা ও ৩২৫ মেট্রিক টন চাল। উপরন্তু এই ত্রাণ বিতরণেও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। ইতিমধ্যে খবর এসেছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর বন্যাদুর্গত মানুষেরা ত্রাণ পাচ্ছে না।
ত্রাণসহায়তা আরও অনেক বাড়াতে হবে। সর্বোপরি বন্যা যে একটা বড় দুর্যোগ আকারে এসে পড়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে তা আরও ব্যাপক হতে পারে, এটা উপলব্ধি করা দরকার।