বনের স্বার্থে কাজ বন্ধ করুন

মোটা দাগে লাভ বা সুবিধা দুই ধরনের—স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। সেই সুবাদে সুবিধাভোগীও দুই ধরনের—তাৎক্ষণিক সুবিধাভোগী ও দীর্ঘমেয়াদি সুবিধাভোগী। যাঁরা তাৎক্ষণিক সুবিধা ভোগে তথা ‘নগদ নারায়ণে’ বিশ্বাসী, তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদের সুবিধার দিকে তাকানোর সময় নেই। দ্রুত নিজের সুবিধাটুকু শুষে নিতে পারাই তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। সে ক্ষেত্রে দশজনের ক্ষতি হলেও তাঁরা তাতে গা করেন না।

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের ভেতরে কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ প্রক্রিয়ায় ঠিক এ ধরনের স্বল্পমেয়াদি সুবিধাভোগীদের তৎপরতার সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সেখানে বন বিভাগের বাধার পরও কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু করেছে এলজিইডি। বন বিভাগের ভাষ্য, সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে পাকা রাস্তা নির্মাণকে আপাতদৃষ্টে জনবান্ধব উন্নয়ন মনে হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা বড় ক্ষতির কারণ হবে।

এই সড়ক পাকা হলে যানবাহনের চলাচল বহুগুণ বাড়বে। এতে একদিকে বন্য প্রাণীর স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হবে, অন্যদিকে কাঠ চোরচক্র সহজেই সংরক্ষিত বন থেকে সেগুনগাছ কেটে ট্রাকে করে চম্পট দিতে পারবে।

অর্থাৎ এই পাকা সড়ক হলে তাৎক্ষণিক সুবিধা পাবেন ঠিকাদার ও কাজ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। স্বল্প মেয়াদে বনের মধ্যে বসবাসকারী কিছু পরিবারের যাতায়াতে হয়তো সুবিধাও হবে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটিকে পরিবেশ ও বনের জন্য ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছে বন বিভাগ। এ কারণে তারা এলজিইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিল। কিন্তু এলজিইডির কর্মকর্তারা কাজ বন্ধ রাখেননি। তাঁরা বলছেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী ও মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা) আসনের সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিনের ডিও লেটারের পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তাটির কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাস্তার কাজ চলছে বলে তাঁরা নিশ্চিত করেছেন।

যেখানে বন বিভাগ এই রাস্তা পাকাকরণকে ক্ষতিকর বলছে, সেখানে খোদ বনমন্ত্রী তাদের ভাষ্যকে আমলে নিচ্ছেন না। তাহলে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এই কাজের মূল সুবিধাভোগী কে বা কারা হবেন। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় কাজ করবেন—এমনটিই জনগণের স্বাভাবিক প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশাকে নস্যাৎ করে নিয়মবহির্ভূতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার কোনোভাবে কাম্য নয়। সেটি বিবেচনায় নিয়ে এখনই সেখানকার রাস্তা পাকাকরণের কাজ বন্ধ রাখা হোক।