ফেরিতে ভিআইপি সুবিধা

সম্পাদকীয়

শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ১৬টি ফেরি চলাচল করে। এর মধ্যে ‘কর্ণফুলী’ নামে একটি ফেরি আছে। আকারে ছোট, মাত্র ছয়টা গাড়ি বহন করতে পারে। এ ফেরির সাধারণ ডিউটি করার কথা নয়। জরুরি প্রয়োজন, যেমন মুমূর্ষু কোনো রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য এ ফেরি রিজার্ভ রাখা হয়েছে।

এ রকম একটা ফেরিই তিতাস ঘোষের প্রাপ্য ছিল। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে জরুরি চিকিৎসা নিতে ঢাকা যাচ্ছিল এই কিশোর। প্রতিটি মুহূর্তই যেখানে মূল্যবান, সেখানে তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ফেরির জন্য ঘাটে তিন ঘণ্টা বসে ছিল। ঘাটে অবশ্য ফেরি একটা ছিল, এক ভিআইপি কর্মকর্তার জন্য আটকে রাখা হয়েছিল সেই ফেরি। তিতাস শেষ পর্যন্ত পথেই মারা যায়। এ ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হয় যে ঘাটে আর কোনো ভিআইপি প্রথা থাকবে না।

এ ঘোষণা যে একটা কথার কথা, আমজনতাকে শান্ত করার জন্য একটা ফাঁকা বুলি মাত্র, ভিআইপি প্রথা যে এখনো বহাল তবিয়তেই আছে, তার প্রমাণ ২০ মার্চের প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন। ‘আমজনতা সিরিয়ালে, ভিআইপি ডাইরেক্ট’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন বলছে, কখনোই বন্ধ হয়নি ভিআইপি প্রথা। তিতাসের মৃত্যুর পর মাস তিনেক শুধু দৌরাত্ম্যটা একটু কম ছিল, এখন আবার সব আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরির জন্য অপেক্ষা করছে আমজনতা, আর তাদের সামনে নিয়মনীতি-লাইন ভেঙে শাঁ শাঁ করে ফেরিতে গিয়ে উঠছে ভিআইপি আর তার দলবল। আর এ রকম ঘটনা যদি দিনে একটা-দুটা হতো তাহলেও কথা ছিল না, কিন্তু দেশে ভিআইপি যে এখন হাজারে হাজার। তাই জীবনের নানা ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় শুধু।

অথচ প্রায়ই আমরা খবরে পড়ি অমুক দেশের প্রধানমন্ত্রী মেট্রোতে করে যাতায়াত করছেন, একটা সিট পর্যন্ত পাননি, সাধারণ যাত্রীর মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই গন্তব্যে যাচ্ছেন। টিভিতে দেখি অমুক দেশের প্রেসিডেন্ট সাধারণ মানুষের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে সরকারি সেবা নিচ্ছেন, লাইন ভেঙে তাঁকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছুটে আসছেন না কোনো কর্মচারী। এসব দেখে-শুনে-পড়ে আমরা অবাক হয়ে যাই। ভাবি এরা কী বোকা নাকি। ক্ষমতাই যদি না দেখাল, নিয়মই যদি না ভাঙল, তাহলে কিসের নেতা। জনগণকেই যদি ভোগান্তিতে না ফেলতে পারল, তাহলে আবার কিসের ভিআইপি। ভিআইপিদের কারণে প্রতিদিন নানা ভোগান্তিতে জেরবার আমাদের কাছে বিদেশি ‘ভিআইপিদের’ এই সব আচরণকে তাই মনে হয় ‘অস্বাভাবিক’।

আহা! কবে এই রকম অস্বাভাবিক আচরণ করবেন আমাদের ভিআইপিরা!