ফেনী কারাগারের কনডেম সেলের ৩ নম্বর কক্ষে ঢুকে যুবলীগের দুই নেতাকে হুমকি দেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এম আজহারুল হক ও ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া পৃথক চিঠিতে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার, আওয়ামী লীগের কর্মী সাহাব উদ্দিন, এস আলম সবুজ ও ফেনী সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন। গত ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিবের (সেবা সুরক্ষা বিভাগ) কাছে তাঁরা এ অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
তবে ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। যুবলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা গত ১৭ জুলাই ফেনী পৌরসভার মধুপুরে তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তিনি এখন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনা প্রমাণ করে, কারাগারের ভেতরে কিংবা বাইরে কোথাও মানুষ নিরাপদ নয়। শাখাওয়াত হোসেন ও আজাহারুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে নাশকতা ও ডাকাতির মামলা আছে। তাঁরা দোষী কি না, সেটি বিচার করবেন আদালত। কিন্তু বিচারের আগেই কীভাবে কারাগারে গিয়ে স্থানীয় সাংসদ নিজাম হাজারীর অনুসারীরা তাঁদের হুমকি দিল? শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি তারা, কারাগারের হুমকির কথা বাইরে এসে প্রকাশ করলে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হতে হবে বলেও ভয় দেখানো হয়েছে। আর এই কাজে ফেনী সদর থানার এসআই নজরুল ইসলাম বিবাদীদের সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ আছে।
ফেনী কারাগারের জ্যেষ্ঠ সুপার মো. রফিকুল কাদেরের দাবি, কারা অভ্যন্তরে বহিরাগত লোকজনের প্রবেশের সুযোগ নেই। সেলের ভেতরে হাজতি আজহারুল হক ও শাখাওয়াতকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলেও তিনি জানান। তবে সুপার স্বীকার করেছেন ৫ জুন স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, দুজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সিভিল সার্জনের সঙ্গে তিনি কারাগারের ভেতরে বৈঠক করেছেন। ১৩ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তাঁর অনুপস্থিতিতে সাংসদ নারী সেল পরিদর্শন করে ফিরে যান। কিন্তু স্থানীয় সাংসদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত হারুন মজুমদার বলেছেন, তিনি সাংসদের সঙ্গে কারাগারে গিয়েছিলেন মধ্যস্থতা করতে। উল্লেখ্য, শাখাওয়াত নিজাম হাজারীর সাংসদ পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের জুনে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। অস্ত্র মামলায় সাজা কম খেটে নিজাম হাজারী কারাগার থেকে বেরিয়ে যান বলে এ-সংক্রান্ত প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে এই রিট করেন তিনি।
এখানে একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। শাখাওয়াত মামলা করেছেন সাংসদের বিরুদ্ধে। সাংসদের অনুসারীরা নাশকতার মামলা এনে তাঁকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করেছে। আবার কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর শাখাওয়াতের ওপর গুরুতর হামলা হয়েছে। কনডেম সেলে ফাঁসির আসামিদের রাখা হয়। অথচ গ্রেপ্তারের পর দুই বিচারাধীন কয়েদিকে কেন সেখানে রাখা হয়েছিল, সেই প্রশ্নেরও উত্তর নেই। অভিযোগের তদন্তকালে ঘটনাগুলোর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটি খুঁজে দেখা দরকার।
পৃথিবীর সব দেশে কারাগারকে সবচেয়ে নিরাপদ স্থান ভাবা হয়। সেখানে বিচারাধীন বা দণ্ডিত যে ব্যক্তিই থাকুন না কেন, রাষ্ট্রের কর্তব্য তাঁদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া। কিন্তু সেই কারাগারে ঢুকে কয়েদিকে হুমকি দিয়ে আসা এবং কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসার পর আসামিকে কুপিয়ে হাসপাতালে পাঠানো কিসের আলামত? তাহলে আইনের শাসন কোথায়?