মহামারিকালে মানুষকে দমবন্ধ পরিস্থিতির মধ্যে যার যার অবস্থানে থেকে ঈদ উদ্যাপন করতে হয়েছে। এর মধ্যে অনেকে করোনায় স্বজন ও প্রিয়জন হারিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় এবারের ঈদযাত্রায় স্বাভাবিকভাবেই ভয়াবহ চাপ তৈরি হবে। এমনিতেই ঈদযাত্রায় যানজটের মধ্যে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা রাস্তায় আটকে থাকা নতুন কিছু নয়। কিন্তু সড়ক ও নৌপথে এবারের অতিরিক্ত চাপ সরকার কীভাবে সামাল দেবে, সেটিই এখন দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর ঈদুল ফিতরে শিথিল বিধিনিষেধের মধ্যেও ঘরমুখী মানুষের অতিরিক্ত চাপ ছিল। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথেই ফেরিতে ভিড়ের কারণে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদযাত্রায় সড়কে মৃত্যু মিছিল মোকাবিলা করাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সড়কে নির্মাণকাজের কারণেই দেশের প্রধান চার মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা-রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি অংশেও সংস্কারকাজ চলছে। তা ছাড়া বিআরটি প্রকল্পের জন্য টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তায় চলাচল রীতিমতো অভিশাপে পরিণত হয়েছে। প্রকল্পটির অতিরিক্ত সময় ও ব্যয় নিয়ে সড়ক বিশেষজ্ঞরাও রীতিমতো বিরক্ত। ১২ কিলোমিটারের এ পথ স্বাভাবিক সময়ে পার হতে তিন-চার ঘণ্টা, এমনকি তারও বেশি সময় লেগে যায়। এখন ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার এ রুট নিঃসন্দেহে ঈদের সময় মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেবে। যদিও ঈদের আগে সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ জেলাভিত্তিক অনেক সড়কে যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড ও চাঁদাবাজির কারণে সৃষ্ট যানজট ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পদ্মা পার হওয়ার একটি রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরেকটি রুটে চাপ বেড়ে ফেরি পেতে কখনো কখনো ৬ থেকে ৯ ঘণ্টা পার হয়ে যায়। রাজধানী থেকে চলাচলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার লাখ লাখ মানুষকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে প্রতিনিয়ত এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফলে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ঢল সামাল দেওয়া কতটা কঠিন হবে, সেটি কারও না বোঝার কথা নয়। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরিতে বাস-ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকলেও সেখানে কয়েকটি ফেরি চালু আছে। ঈদেও সেই ঘাট দিয়ে বাস-ট্রাক পারাপারের ব্যবস্থা থাকবে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গেলে সেই ঘাটেও বাস-ট্রাক পারাপার ব্যবস্থা রাখাটা সমীচীন হবে। দুই রুটেই ফেরির সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প নেই। ফেরি ভেড়ার জন্য ঘাটের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
ফেরিঘাট তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)। তাদের কথা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রয়োজনে বিকল্প ঘাট তৈরি করতে তারা প্রস্তুত। ফলে বিআইডব্লিউটিএকে এখনো কাজে লাগানো উচিত বলে আমরা মনে করি। কারণ, সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তারাই সতর্ক করছেন, ঈদে এবার চাপ ব্যাপকভাবে বাড়ার আশঙ্কা আছে। সে তুলনায় প্রস্তুতি সামান্যই।
যানজটের কারণে মানুষের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেলে তা হবে খুবই হতাশাজনক। এর মধ্যে ঈদযাত্রায় গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছরই অনেক প্রাণহানি ঘটে। দুর্ঘটনার কারণেও রাস্তা আটকে গিয়ে লম্বা যানজট তৈরি হয়। এবার কালবৈশাখীর আশঙ্কাও থাকছে, নৌপথে চলাচল ঝুঁকিকেও মাথায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে নৌযানগুলো দুর্ঘটনায় পড়ে প্রাণহানির ঘটনা নতুন কিছু নয়। ফলে সড়ক ও নৌপথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ তদারকি সংস্থাগুলোকে কঠোর থাকতে হবে। তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিতে পারে। ফিটনেসবিহীন বাস ও লঞ্চ কোনোভাবেই যাতে চলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। আর সপ্তাহ দুয়েক পরেই ঈদযাত্রা শুরু হবে। এর মধ্যে অনেক সড়কে চলমান সংস্কার ও উন্নয়নকাজ ঈদযাত্রা শুরুর আগেই সম্পন্ন করার নির্দেশনা আছে। আমরা আশা করছি, সেগুলো দ্রুত শেষ করে মানুষের ঈদযাত্রাকে স্বস্তিদায়ক করার সব উদ্যোগ নেবে সরকার।