সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে মরদেহ রাখার হিমঘর নির্মাণের বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এটা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শুক্রবার প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হিমঘরটির উদ্বোধন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আবদুস সোবহানের অর্থায়নে হিমঘরের ভবন নির্মাণে ২০ লাখ টাকা ও যুক্তরাজ্যের জগন্নাথপুর উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে হিমঘরের সরঞ্জাম কিনতে আরও ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়। হিমঘর নির্মাণের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক প্রবাসী। অনেক সময় প্রবাসীদের মা–বাবা মারা গেলে লাশ রাখার জায়গা না থাকায় প্রবাস থেকে দেশে এসে আর শেষ দেখা হয় না। তাই এই উদ্যোগ। জগন্নাথপুর উপজেলার প্রবাসীদের এই ভালো উদ্যোগের দৃষ্টান্ত অন্যরা অনুসরণ করতে পারেন।
আমাদের দেশে সাধারণত সব হাসপাতালে লাশ রাখার হিমঘর থাকে না। শনাক্তকরণের জন্য, ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষা এবং ময়নাতদন্তের পর দাফন বা স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষার সময়টিতে লাশ হিমঘরে রাখা হয়। দেশে এমনিতে রোগী অনুপাতে হাসপাতালের সংখ্যা অনেক কম আর হিমঘরের সংখ্যা তো একেবারেই অপ্রতুল। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নেই লাশ রাখার জন্য হিমঘর। আবার দেখা যায়, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক হিমঘরের ফ্রিজ মাসের পর মাস ধরে নষ্ট থাকছে। সেগুলো ঠিক করার কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে চাইলেও লাশ রাখা যায় না।
আমাদের দেশের বহু মানুষ জীবিকার সন্ধানে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাঁদের বৃদ্ধ মা–বাবা বা অন্য আত্মীয়স্বজন কেউ হঠাৎ করে মারা গেলে শেষ দেখা করার জন্য চাইলেও চটজলদি আসতে পারেন না। এ জন্য কিছুদিন লাগে। কিন্তু এ সময়ে সেই সব মরদেহের কী হবে? কবর দেওয়ার আগপর্যন্ত তো কোথাও তা রাখতে হবে। এ জন্য দরকার যথাযথ তাপমাত্রার হিমঘর। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, পর্যাপ্ত হিমঘরের অভাবে তা আর হয়ে ওঠে না। স্বজনেরা অপেক্ষা না করে মৃতের লাশ দাফন করে ফেলেন। ফলে সন্তান শেষবারের মতো দেখতে পান না প্রিয় বাবা বা মাকে, বাবা দেখতে পান না প্রিয় সন্তানের মুখ বা স্বামী দেখতে পান না তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখ।
জগন্নাথপুরের মতো দেশের সব উপজেলায় যদি এভাবে হিমঘর গড়ে ওঠে, তাহলে বহু মানুষ উপকৃত হবে। তবে শুধু প্রবাসীদের অর্থায়নেই হিমঘর তৈরি হতে হবে তা নয়, দেশে যাঁরা ধনী বা সামর্থ্যবান রয়েছেন, তাঁরাও এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারেন। আমরা মনে করি, সরকারেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত।