আমাদের দেশে সরকারি প্রকল্পগুলোতে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি এখন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকারি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে অথচ তার মেয়াদ বাড়েনি—এমনটা খুব কম ঘটেছে। কিন্তু সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় তিনটি সড়কের উন্নয়নকাজের প্রকল্পের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তার নজির খুব একটা নেই। তিন সড়কের উন্নয়নকাজের জন্য নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক মাসের বেশি সময় পার হয়েছে, অথচ কাজ এখনো শুরুই হয়নি।
প্রথম আলোয় বুধবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই তিন সড়কের উন্নয়নকাজের দায়িত্ব পায় কিশোরগঞ্জের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুটি সড়কের কাজ পায় কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার মেসার্স হামিদা কনস্ট্রাকশন। অন্য কাজটি পায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মেসার্স সানজিবা এন্টারপ্রাইজ। কাজ শুরু করার জন্য গত বছরের ২৮ নভেম্বর এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ এখনো শুরুই হয়নি। কাজ শুরু না করায় এ উপজেলার ১১টি গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে সড়ক তিনটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
কাজ শুরু না করার কারণ হিসেবে মেসার্স হামিদা কনস্ট্রাকশন জানিয়েছে, তারা অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সড়কের কাজ যথাসময়ে শুরু করতে পারেনি। ইটজনিত সমস্যায় কাজ শুরু করতে পারেনি বলে জানিয়েছে মেসার্স সানজিবা এন্টারপ্রাইজ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি যে কাজে অবহেলা করেছে, সেটা স্পষ্ট। অন্য কাজ নিয়ে যদি ব্যস্তই থাকবে, তাহলে সড়ক উন্নয়নকাজের দায়িত্ব কেন নেওয়া হলো। ইটের সমস্যার বিষয়টিও ঠিক ধোপে টেকে না।
যথাসময়ে কাজ শুরু আর শেষ না করলে স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। মূলত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের লোভের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন নৈরাজ্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। নকশা পরিবর্তন, ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বৃদ্ধি, নির্মাণসামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মপরিধি বৃদ্ধির নামে কৌশলে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহার, ভাতা নেওয়াসহ নানা সুবিধার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চান না দ্রুত প্রকল্প শেষ হয়ে যাক। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে সরকার তথা জনগণ। কারণ, জনগণের করের টাকায় এসব প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
জনগণের অর্থের এই অপচয় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের সব মন্ত্রণালয়কে তাদের অধীন সব প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম ও দুর্নীতি করবে, তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা, লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।