পোশাকশ্রমিকদের বেতন

পোশাক কারখানার জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও এখনো অনেক কারখানার শ্রমিকেরা গত মার্চ মাসের বেতন পাননি, অনেকের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনও বকেয়া। সরকার এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ নিশ্চিত করার স্বার্থে।

করোনার এই সময়ে মহামারি একা আসেনি, সঙ্গে নিয়ে এসেছে ক্ষুধার হাহাকার। বিভিন্ন জায়গা থেকে খাদ্যাভাবজনিত নানা খবর আসছে। বাংলাদেশে পোশাকশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ এবং দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ জোগান দেয় এই খাত। এই বিপুল মুনাফার জোগান আসে মূলত শ্রমিকদের সস্তা শ্রম থেকে। বছরের পর বছর সরকার বাজেটের মাধ্যমে গতানুগতিক পথে—এ ছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক অজুহাতে এই শিল্পের মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, পোশাকশ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা লেগেই থাকে।

করোনা অন্যবারের মতো নয়, ঈদের আগের মতো নয়। এটা বাঁচা-মরার প্রশ্ন। পোশাকশ্রমিকেরা বেতনহীন থাকা মানে কেবল তাঁদেরই অনাহারী থেকে মৃত্যুর মুখে পড়া নয়, এই ৪০ লাখ কর্মীর সঙ্গে সমানসংখ্যক পরিবার জড়িত। এই শ্রমিকদের টাকার একটি অংশ কৃষি খাতে বিনিয়োজিত হয় তঁাদের পরিবারের মাধ্যমে। পোশাকশ্রমিকদের অভাব-অনাহার বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও কতটা গুরুতর করে তুলবে?

সাধারণভাবে মাসের ১০ তারিখের মধ্যে শ্রমিকদের আগের মাসের বেতন পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবার আগেই কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ঢাকা মহানগরীর বাইরে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৮৮২টি কারখানার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৩৭৩টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। এই তথ্য শিল্প পুলিশের।

সংগঠনটির সভাপতি বলেছেন, ১৬ তারিখের মধ্যে ৮০ ভাগ কারখানা শ্রমিকদের বেতন দিয়ে দেবে। বাকি ২০ ভাগ কারখানার শ্রমিকদের বেতন ২০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে দেওয়া হবে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে কোনো বিলম্ব করার সুযোগ নেই। কারণ, অনাহারী ও অভাবী মানুষ কখনো ঘরে বসে থাকে না। তারা খাদ্যের খোঁজে, ত্রাণের খোঁজে, খাবারের দাবিতে বের হয়। দেশের বর্তমান দুর্যোগময় করোনা পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সামাজিক অসন্তোষ কাম্য নয়। পোশাকশ্রমিকদের গত মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব নিশ্চিত করতে হবে। বিজিএমইএ নেতৃত্ব ও সরকারকে এ ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা আছে, তা দূর করতে হবে।