এ বছর কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এ ছাড়া আম্পান নামের এক ঘূর্ণিঝড়ও আঘাত হেনেছিল এই মহামারিকালেই, ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেছে, শরৎ শেষ হয়ে হেমন্ত শুরুর পথে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের যেন শেষ হচ্ছে না। সর্বশেষ নেত্রকোনা থেকে খবর এসেছে, পাহাড়ি ঢলে সেখানকার ১০টি উপজেলার অন্তত ২০ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির আমন ধানের চারা ডুবে গেছে। শুধু বারহাট্টা উপজেলাতেই প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমির আমনের ক্ষতি হয়েছে। এর আগে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলাটির নিচু এলাকাগুলো আরও তিনবার প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নেত্রকোনা কার্যালয় সূত্রে বলা হয়েছে, এবারের পাহাড়ি ঢলের কারণে আমনের খেত প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৬২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। এই কৃষকেরাই এর আগেও বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার কারণে তাঁদের আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছিল; শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলেও তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া তাঁরা বোরো ধানের ভালো দামও পাননি। এর মধ্যে যাঁরা একদম প্রান্তিক কৃষক, তাঁদের পরিবারে করোনাকালীন অর্থসংকট বিশেষভাবে অনুভূত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সর্বশেষ পাহাড়ি ঢলে আমনের ক্ষতির কারণে তাঁদের অর্থনৈতিক নাজুকতা আরও বাড়বে, ফলে তাঁদের জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকট। আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হচ্ছে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি হলে এবং উজান থেকে পাহাড়ি ঢল আসা আরও কয়েক দিন চললে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষত প্রান্তিক কৃষকদের ঘরে খাদ্য ও পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে এই কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে তাঁদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তা ছাড়া এ রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলোর নারী ও শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, যা চলমান মহামারির প্রেক্ষাপটে বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। এই কৃষকদের পরবর্তী মৌসুমের ফসল ফলানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য এককালীন আর্থিক সহযোগিতা কিংবা স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।