পদ্মা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে অবৈধভাবে মাটি তোলা হচ্ছে। সেই মাটি স্তূপ করে রাখা হচ্ছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কাছে। এর সঙ্গে জড়িত দুজন ব্যবসায়ী, যথারীতি তাঁরা প্রভাবশালী। সবার চোখের সামনেই তাঁরা অবৈধ এ কাজ করে যাচ্ছেন। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে রাস্তা ও মানুষের বসতি। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকারি ঘর নির্মাণের কাজে উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই নদী থেকে তঁারা মাটি তুলছেন। অথচ প্রশাসন বলছে, সেখানে সরকারি ঘরের কোনো বরাদ্দ নেই। তাহলে নদী থেকে তোলা মাটি যাচ্ছে কোথায়? বিক্রি করা হচ্ছে সেই মাটি।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ক্যানেলঘাট–সংলগ্ন পদ্মা নদীতে আফজাল মোল্লা ও লোকমান মণ্ডল অবৈধভাবে খননযন্ত্র বসিয়েছেন। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ক্যানেলঘাট-সংলগ্ন নুরু চেয়ারম্যানের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মার ক্যানেল বা শাখানদী। এর বিপরীতে রয়েছে ইদ্রিস মিয়ার পাড়া। দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নদী থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যন্ত্রের সাহায্যে মাটি তোলা হচ্ছে। সেই মাটি পাইপ দিয়ে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাছে স্তূপ করা হচ্ছে। সেখান থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।
যেখানে খননযন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে, তার কাছেই দুটি রাস্তা। নদীভাঙনের শিকার দুই শতাধিক পরিবার রাস্তার পাশ ঘেঁষে বসতি গড়ে তুলেছে। ক্রমাগত মাটি তোলায় সেখানে গভীর গর্ত হয়েছে। দুটি রাস্তার পাশ থেকে মাটি ধসে পড়ছে। ফলে যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে রাস্তার পাড়। সেটা হলে নদীভাঙনের শিকার হয়ে যাঁরা সেখানে বসতি গড়েছেন, তঁারা নতুন করে ঘর হারাবেন।
অভিযুক্ত আফজাল মোল্লার দাবি, উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই মাটি কাটা হচ্ছে। অন্যদিকে গোয়ালন্দের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, ওই এলাকায় সরকারি কোনো ঘর বরাদ্দ নেই। সরকারি বরাদ্দের ঘরে মাটি ফেলানোর কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ অপকর্মের সঙ্গে সরকারি দলের অনেকে জড়িত।
অর্থনৈতিক স্বার্থে প্রভাবশালীদের এ ধরনের অপকর্ম নতুন নয়। গোয়ালন্দের দৌলতপুরেও নিজেদের পকেট ভারী করতে তারা রাস্তা ও মানুষের বসতি ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। সেগুলো রক্ষায় অবিলম্বে পদ্মা নদী থেকে মাটি তোলা বন্ধ করতে হবে। ঝুঁকিতে থাকা রাস্তা যাতে ভেঙে না যায়, সে জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। যেসব দুর্বৃত্ত এ কাজে জড়িত, তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।