২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক হত্যা

ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস–সংযোগ থাকার বিষয়টি কারও অজানা নয়। তিতাস গ্যাস থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন—সবাই বিষয়টি জানেন, এ নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। অবৈধ গ্যাস–সংযোগ নিয়ে খবর লিখেছিলেন স্থানীয় দৈনিক বিজয় পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ইলিয়াস হোসেন (৫২)। প্রভাবশালীদের সঙ্গে মাদকসহ নানা ইস্যুতে তাঁর বিরোধ ছিল। পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাঁকে ১১ অক্টোবর কুপিয়ে হত্যার কথা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদমপুর জিওধারা এলাকায় অবৈধ গ্যাস–সংযোগ দিয়ে প্রথমে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া এবং এরপর মাসোহারা আদায় করার বিষয়টি কারও অজানা ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন অবৈধ গ্যাস সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? তা ছাড়া গ্যাস–সংযোগ যদি দিতেই হয়, তাহলে বৈধভাবে দিতে সমস্যা কোথায়? সরকারকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে যাঁরা সুবিধা দিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন, সেসব কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।

ইলিয়াস হত্যার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী জুলেখা বেগম বন্দর থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ প্রধান আসামি তুষার মিয়াসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তুষার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর আগে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিক ইলিয়াস বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন কী ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেটি খতিয়ে দেখা উচিত।

সাংবাদিকদের নির্যাতন বা হত্যা করলে কিছুই হয় না। তাই তাঁরা মাস্তান, একশ্রেণির নেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ অনেকের সফট টার্গেটে (সহজ লক্ষ্যে) পরিণত হয়েছেন। এ প্রবণতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং এর কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি নাজুক করে দিয়েছে, যা খুবই উদ্বেগজনক।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) ২০১৮ সালে বিশ্বে সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়ার যে তালিকা প্রকাশ করে, তাতে বিচার না হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দশম। বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না বললেই চলে—এ বক্তব্যের সঙ্গে কেউ দ্বিমত প্রকাশ করবেন বলে মনে হয় না। মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিনের তথ্যমতে, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, মাত্র আটটি হত্যা মামলার বিচার হয়েছে। এ আটটির মধ্যে পাঁচটি মামলার বিচারের রায় নিহত সাংবাদিকদের স্বজনেরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। যশোরের সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যার বিচার হয়নি ২০ বছরেও। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার জন্য ৭৫ বার সময় নিয়েছে তদন্ত সংস্থা। সব ঘটনার চিত্র কমবেশি একই রকম। এ অবস্থার অবসান হোক, সাংবাদিক ইলিয়াসসহ প্রতিটি হত্যার বিচার যেন শুধু প্রতিশ্রুতিতে আটকে না থাকে।