ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় সালিসের মাধ্যমে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনাটিকে নব্য ফতোয়াবাজির সঙ্গে তুলনা করা যায়। এই ফতোয়াবাজি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দিলালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নয়জন ছাত্রের বিরুদ্ধে ওই শিশুর ওপর যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ স্বাভাবিক। কিন্তু আইনকানুনের কোথাও স্কুলশিক্ষকদের আইন–বহির্ভূত সালিস বসাতে এখতিয়ার দেওয়া হয়নি। অজ্ঞতাপ্রসূত হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু অভিযুক্ত ছাত্রদের কাছ থেকে মুচলেকা আদায় করে তাদের দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা উদ্বেগজনক। স্কুল এ ধরনের অনৈতিক ও বেআইনি কাজের মদদদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে না। সুতরাং, শিক্ষা বিভাগের উচিত হবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া। পুলিশ ও প্রশাসনের চাপে সালিসের আয়োজন করাটাই একটি সন্দেহজনক পদক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হয়।
যখন এটা দিবালোকের মতো সত্য যে, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটির অভিভাবকেরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে মামলা দায়েরে ভীত, তখন নান্দাইল উপজেলার ইউএনও বলছেন, মেয়েটির পরিবার অভিযোগ করলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, দুর্বলের পাশে দাঁড়ানোই তাঁর কাজ। পুলিশ চাইলেই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে যথা পদক্ষেপ নিতে পারে। কারণ, সমাজপতিরা মুচলেকা আদায় করেছেন, সেটিই এখন অপরাধ সংঘটনের প্রামাণ্য দলিল। সুতরাং, ইউএনওর উচিত হবে পুলিশকে মামলা দায়ের করাতে বাধ্য করা।
আমরা অবশ্যই যৌন নিগ্রহের প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনকে গুরুত্ব দেব। যাঁরা সালিসের কাজটি করেছেন, তাঁরা তাঁদের নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে পারতেন, যদি অভিযুক্ত ছাত্রদের দেওয়া মুচলেকা পুলিশের কাছে পাঠাতেন। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ছাত্রদের রেহাই দেওয়ার কূটকৌশল হিসেবে এটা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
অভিযুক্ত ছাত্রদের ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ এবং তাদের অভিভাবকদের ‘মৃদু শাসন’ (কথিতমতে জুতাপেটা) এবং স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির ‘মীমাংসা’ করার বিষয়টি প্রচলিত আইনে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, সমাজে এ ধরনের অপরাধের প্রবণতা সাম্প্রতিককালে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতি নমনীয় থাকা জনপ্রশাসনের উচিত হবে না।