ধুনটে সিসি ব্লক লুণ্ঠন

এ দেশের বহু লোক আইন মেনে চলাকে ভীরুতা এবং আইন অমান্য ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করাকে জাতীয় পর্যায়ের বীরত্ব বলে জানে। রাষ্ট্রকে ফাঁকি দেওয়ার মধ্যে গৌরব বা বিপ্লবের কিছু নেই, বরং এর মধ্যে কেবল চারিত্রিক দীনতার দ্যোতনাই যে নিহিত, তা তাঁরা বুঝতেও পারেন না, বুঝতে চানও না। এর সর্বশেষ নজির দেখা গেল বগুড়ার ধুনট উপজেলায়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, ধুনটের যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের গায়ে বসানো সিসি ব্লক খুলে রীতিমতো ট্রাকে করে নিয়ে গেছেন পার্শ্ববর্তী জেলা সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার যুবলীগের সদস্য

সোহেল রানা। তিনি নিজের বালু পরিবহনের জন্য ট্রাক চলাচলের রাস্তা বানানোর কাজে ব্লকগুলো ব্যবহার করেছেন। তাঁর দাবি, ব্লকগুলো এনে তিনি অন্যায় করেননি।

পাথর, সিমেন্ট ও বালুর মিশ্রণ দিয়ে সিসি ব্লক নির্মাণ করা হয়। যমুনার তীর স্লোপ করে মাটিতে জিও চট বিছিয়ে তার ওপর ওই সিসি ব্লকগুলো বসানো হয়েছিল। এখন প্রকল্প এলাকায় নদীর পানি কমে ওই সিসি ব্লকগুলো তীরে পড়ে আছে। এ অবস্থায় সোহেল রানা ২০০-৩০০টি সিসি ব্লক তুলে ট্রাকে করে নিয়ে যান।

উদ্বেগের বিষয় হলো, সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তীর সংরক্ষণ বাঁধের এই ব্লক সরিয়ে নিলে শত শত বাড়িঘর ও জমাজমি যে হুমকিতে পড়বে, সেটিই সোহেল রানা স্বীকার করেননি। তাঁর মনে হয়েছে এই ব্লক আর এখানে কাজে লাগবে না, তাই এগুলো পৈতৃক সম্পত্তির মতো নিয়ে যাওয়া অন্যায় কিছু নয়। সামনেই বর্ষাকাল। যমুনা থাবা হানবে। তখন তীর সংরক্ষণ বাঁধের ওপর পানির চাপ বাড়বে। ব্লক না থাকায় বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমনকি পানির স্রোতে ওই স্থান দিয়ে ভেঙেও যেতে পারে। তেমন কিছু হলে বিপর্যয় ঘটবে। কিছু ব্লক সরিয়ে নেওয়ার পরিণতিতে তখন বহু ঘরবাড়ি বিলীন হতে পারে, যা বহু মানুষের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

বাঁধটির নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের। সোহেল রানা প্রকাশ্যে এবং ট্রাকে করে ব্লকগুলো সরিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন, সেটা এক বড় প্রশ্ন। সোহেল রানার মতো যাঁরাই এভাবে তীর রক্ষা বাঁধকে বিপন্ন করে তুলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।